একজন মুহাম্মদ ও বনু কোরাইজা গণহত্যা
যেদিন সকালে মক্কার সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ না করে ফিরে গেলো, ঠিক সেইদিন দুপুরেই মুহাম্মদ গণহত্যার উদ্দেশ্যে দূর্বল বনু কোরাইজা গোত্রে আক্রমণ করলো তার দলবল নিয়ে। কিন্তু কারণটা কি?
মক্কার সৈন্যবাহিনী চলে যাওয়ার পর সকল মুসলিম সৈন্যরা রিলাক্স মুডে থাকলেও, মুহাম্মদ কিন্তু শান্ত হতে পারেনি। নিজেদের হীনমন্যতা দূর করতে, জিহাদীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এবং উপরন্তু কিছু লুটের মাল পাওয়ার পরিকল্পনা করলো মুহাম্মদ। আর এজন্য খুব দূরেও যেতে হবে না, কাছেই অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ টার্গেট বনু কুরাইজা গোত্র রয়েছে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই কিভাবে আক্রমণ করবে? একটা উছিলা তো লাগেই। সবাইকে জানালো, জিব্রাইল এসেছিলো, তার কানে ফিসফিস করে বলে গেছে বনু কোরাইজা গোত্রে হানা দেয়া লাগবে। আল্লাহর তরফ থেকে স্পেশাল গায়েবী নির্দেশ। মানতেই হবে। যুহরের পরপর সবার প্রতি নির্দেশ ছিলো আসর এর নামাজ পড়তে হবে বনু কোরাইজাতে। দেরী করা যাবে না।
Bukhari Vol. 4, Book 52, Hadith 68 । বাংলা ভার্শন
২৮১৩. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন, তখন জিব্রীল (আঃ) তাঁর নিকট এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির মত ধুলি জমেছিল। তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বানূ কুরায়যার প্রতি ইশারা করে বললেন, এদিকে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের দিকে বেরিয়ে পড়লেন। (৪৬৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৫)
তো পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ হলো বনু কোরাইজা তে। বেশ কিছুদিন বনু কোরাইজা টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হলো। বনু কোরাইযার লোকেদের ভাগ্য এখন মুহাম্মদের হাতে।
এমন সময়, বনু আউস গোত্রের লোকজন মুহাম্মদের কাছে দাবী জানালো যে, কুরাইজার লোকেদের বিচারের দায়িত্ব তাদের গোত্রের কাউকে দেয়া হোক। কিন্তু বনু আউস গোত্রের লোকেদের এমন দাবীর কারণ কি ছিলো? জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। অতীতে, দুটি মুসলিম গোত্র ইয়েমেন থেকে মদিনাতে এসেছিলো। একটি হচ্ছে বনু আউস এবং অপরটি বনু খাযরাজ। এই দুই গোত্রের মধ্যে দন্দ্ব লেগেই থাকতো, একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতা করতো। এই দুই মুসলিম গোত্রের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ইহুদি গোত্রের মিত্রত্ব ছিলো। বনু খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিলো ইহুদি গোত্র বনু কায়নুকা। এবং, বনু আউস গোত্রের মিত্র ছিলো বনু কোরাইজা। তো, মুহাম্মদ যখন বনু কায়নুকা গোত্রকে আক্রমন করে তাদের পরাজিত করে এবং তাদের হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন তাদের মুসলিম মিত্র বনু খাযরাজ এগিয়ে এসেছিলো। খাযরাজ গোত্রপ্রধান আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুহাম্মদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে বিচারের দায়িত্ব নিয়েছিলো এবং তাদের মেরে ফেলার বদলে মদিনা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলো।
তাই, এবার যেহেতু বনু কোরাইযাকে পরাজিত করা হয়েছে যারা ছিলো বনু আউসের অতীত মিত্র, তাই এবার বনু আউস মুহাম্মদের কাছে দাবী তুললো তাদের গোত্রের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ দিতে। তো, মুসলিম গোত্রদুটিকে অভ্যন্তরীন কোন্দল থেকে বিরত রাখতে মুহাম্মদের এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না এবং মুহাম্মদ বনু আউস গোত্রের একাংশের প্রধান সাদ ইবনে মুয়ায কে মনোনীত করলো বনু কোরাইজার ভাগ্য নির্ধারন করার জন্য।

তো, উপস্থিত সকলের সামনে সাদ তার বিচারের রায় দিয়ে বললো, বনু কোরাইযার সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা করা হবে, তাদের ধন সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা হবে এবং সকল নারী ও শিশুদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক করা হবে। আর এ ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্রই মুহাম্মদ ঘোষণা দিলো, সাদের বিচার একদম সঠিক। আল্লাহপাক নিজে যেরকম বিচার করতেন, সাদ ঠিক তেমন বিচারই করেছে।
Bukhari Vol. 5, Book 58, Hadith 148 । বাংলা ভার্শন
৩৮০৪. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, কতিপয় লোক (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)-কে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) নেমে আসে। তাঁকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হল। তিনি গাধায় সাওয়ার হয়ে আসলেন। যখন মাস্জিদের নিকটে আসলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি অথবা (বললেন) তোমাদের সরদার আসছেন তাঁর দিকে দাঁড়াও। তারপর তিনি বললেন, হে সা‘দ! তারা তোমাকে সালিশ মেনে বেরিয়ে এসেছে। সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমি তাদের সম্পর্কে এ ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হোক এবং শিশু ও মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা হোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার ফায়সালা মোতাবেক ফায়সালা দিয়েছ অথবা (বলেছিলেন) তুমি বাদশাহর অর্থাৎ আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা করেছ। (৩০৪৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫২৯)

তো, এবার মুহাম্মদের নির্দেশে বনু কোরাইযার সকল সাবালক পুরুষদের হত্যা করার মিশন শুরু হলো। তাদের উলঙ্গ করে পরীক্ষা করা হতো কার কার গুপ্তাঙ্গে চুল উঠেছে। যাদের চুল ছিলো না, তাদের যুদ্ধবন্দীদের দলে পাঠিয়ে দেয়া হতো। আর যাদের চুল উঠেছে তাদের মধ্য থেকে ছোট ছোট দল আকারে এক এক দল করে বের করে আনা হতো এবং তাদের মাথা কেটে খনন করা গর্তগুলোতে ফেলে দেয়া হতো। এভাবেই হত্যার কাজ চললো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। সেদিন গণহত্যায় নিহত মোট পুরুষের সংখ্যা ছিলো ৭০০ বা ৮০০ এবং মতান্তরে ৮০০ বা ৯০০ পর্যন্ত।
Abu Dawud, Book 39, Hadith 4390 । বাংলা ভার্শন
৪৪০৪। আতিয়্যাহ আল-কুরাযী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বনী কুরাইযার বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তারা দেখতো, যার নাভীর নীচে চুল উঠেছে তাকে হত্যা করা হতো; আর যার উঠেনি, তাকে হত্যা করা হতো না। আর আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, যাদের তা উঠেনি।

ওদিকে, বনু কুরাইজার সকল সম্পদ, নারী ও শিশুদের থেকে এক পঞ্চমাংশ মুহাম্মদ রাখার পর বাকিটা ভাগ করে দেয়া হলো সকল মুসলিম যোদ্ধাদের মাঝে। আল্লাহর রাসূল সাদ বিন জায়িদ আল আনসারী কে নাজদা নামক দাস মার্কেটে পাঠিয়েছিলেন সাথে কিছু কুরাইযা যুন্দবন্দী নারীদের দিয়ে, তাদের বিক্রি করে ঘোড়া এবং অস্ত্রসস্ত্র কিনে আনার জন্য।

কুরাইযার সকল পুরুষদের কল্লা কাটা হচ্ছে দলে দলে, নারী ও শিশুদের বন্দী ও কতককে বিক্রি করতে পাঠানো হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অসহায় কুরাইযার কারও মানসিক অবস্থা ঠিক থাকার কথা নয়। সেদিন তেমনি এক কুরাইযা নারীকে দেখেছিলেন হযরত আয়েশা। ঐ মহিলাটি তার কাছাকাছিই ছিলো। যাকে হত্যা করা হয়েছিলো মুহাম্মদকে গালি দেয়ার অপরাধে। যখন হত্যার উদ্দেশ্যে মহিলাটিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখনও মহিলাটা উচ্চস্বরে হাসছিলেন। আয়েশা এই দৃশ্য দেখে সেটি ভুলতে পারছিলেন না। এমন করুণ দৃশ্য দেখলে একজন প্রকৃত মানুষ সে দৃশ্য সহজে ভুলতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক।
Abu Dawud, Book 14, Hadith 2665 । বাংলা ভার্শন
২৬৭১। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী কুরাইযার কোনো মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তবে এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডেকে বললো, অমুক মহিলাটি কোথায়? সে বললো, আমি। আমি (‘আয়িশাহ) বললাম, তোমরা কি হলো, (ডাকছো কেন)? সে বললো, আমি যা ঘটিয়েছি সেজন্য (সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছিলো)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হরো। আমি ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। আমি তার আচরণে অবাক হয়েছিলাম যে, তাকে হত্যা করা হবে একথা জেনেও সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো।
বনু কোরায়জার যুদ্ধবন্দী নারীদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ বেছে নেন ১৫ বছর বয়সী সুন্দরী কিশোরী রায়হানা বিনতে জায়িদ / রেহানা বিনতে যায়িদ কে। মুহাম্মদ রায়হানা কে প্রস্তাব করেছিলেন বিয়ে করতে। কিন্তু রায়হানা তাতে রাজি না হয়ে বরং তাকে দাসী হিসেবেই রেখে দিতে বলেছিলেন। রায়হানার কাছে মুহাম্মদের বউ হওয়ার চেয়ে দাসী হওয়া অপেক্ষাকৃত কম অসম্মানের বলে মনে হয়েছে। যাহোক, যুদ্ধবন্দিনী নারী যেহেতু হালাল, তাই মুহাম্মদ বাড়াবাড়ি না করে রায়হানাকে দাসী হিসেবে রেখে দিতেই রাজি হলো। মেয়েটাকে ভোগ করাই আসল কথা, বিয়ের মন্ত্র পড়া হোক বা না হোক, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। অবশেষে, রায়হানা নামক মেয়েটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষের সান্নিধ্যে এসে ধন্য হলেন (পড়ুন ধর্ষিতা হলেন)।

No comments