চন্দ্রপৃষ্ঠে সুমধুর আজানের ধ্বনি এবং নীল আর্মস্ট্রং এর ইসলাম গ্রহণ!
২১ শে জুলাই, ১৯৬৯। চাঁদের বুকে কোন মানুষ প্রথমবারের মত পদচিহ্ন এঁকে দিলো। সফল সেই মানুষটির নাম নীল আর্মস্ট্রং। তিনি ছিলেন Apollo 11 এর মিশন কমান্ডার। প্রায় ২০ মিনিট পর আর্মস্ট্রং এর সঙ্গী হলেন অলড্রিন। তারা চাঁদের বুকে পায়চারি করছিলেন। ঠিক এমন সময়, মহাকাশ থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছিলো! একটি অজানা ভাষায় কিছু সুমধুর কথা ভেসে আসছিলো। যেহেতু নীল আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন আগে এই ভাষাটি কোনদিন শোনেন নি, তাই তারা এর অর্থ কিছুই বুঝলো না… তবে তাদের মনে বিষয়টি গেথেঁ গিয়েছিলো…
এই মিশনের বেশ কয়েক বছর নীল আর্মস্ট্রং পিরামিড দেখার জন্যে মিশর ভ্রমণে যান। যখন তিনি বিকালে হাঁটতে বের হলেন হোটেল থেকে, ঠিক তখনই আশ্চর্য হলেন! সেই শব্দ! সেই শব্দটি তিনি আবারও শুনতে পেলেন যা তিনি চাঁদে শুনেছিলেন! অবাক হয়ে সাথের মিশরীয় বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের শব্দ? কি বলা হচ্ছে? বন্ধুটি তাকে জানালো, এটা আসরের আজান। মুসলিমরা প্রার্থনার আগে এভাবেই আজান দিয়ে সবাইকে আহবান করে। আর্মস্ট্রং অবাক হলেন এবং ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী হলেন। কুরান এর অনুবাদ পড়লেন। মুগ্ধ আর্মস্ট্রং ইসলাম কবুল করে এমেরিকায় ফিরলেন। সুবহানাল্লাহ!
আচ্ছা, এমন সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকা সত্যেও নাস্তেকগুলা ক্যান ইসলাম গ্রহন করে না? ওরা চোখ থাকতে অন্ধ ক্যান? আর কি প্রমাণ দিলে ওরা ইসলামকে সত্য বলে মেনে নিবে? আর্মস্ট্রং এর আজান শোনা এবং ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম নাস্তেক আক্কাস আলীকে। কিন্তু আক্কাইচ্ছা তো এই মোজেজা স্বীকার করলোই না, বরং কিছু উলটা পালটা কথা শুনিয়ে দিলো। অন্তরে সীলমোহর মারা থাকলে যা হয় আরকি। শুনুন তার কথাগুলোঃ
আচ্ছা, আর্মস্ট্রং চাঁদে আজান শুনলো কিভাবে? চাঁদে তো পৃথিবীর মত বায়ুমন্ডল নেই। আর বাতাস না থাকলে সেখানে কোন শব্দ সৃষ্টি হবে না। কেননা, শব্দ মানেই হচ্ছে বাতাসের কম্পন যা আমাদের কানের পর্দায় আঘাত করলে আমরা শব্দ শুনি। বাতাসই যদি না থাকবে, তাহলে শব্দ আসবে কোত্থেকে?
হয়ত মুমিন ভাইরা এখন ক্ষেপে গিয়ে প্রশ্ন করবেন, “আরে বেয়াক্কেল, চান্দে বাতাস আর শব্দ যদি না ই থাকবে, তাহলে নভোচারীরা একে অপরের সাথে ক্যামনে কথা কয়? তুই কি আমাগো বলদ ভাবছিস?”
মুমিন ভাইয়েরা, মাথা ঠান্ডা রাখেন। চাঁদে/মহাকাশে দুই নভোচারী পরস্পর ঠিকই কথা বলে, তবে সিস্টেমটা জটিল। মহাকাশ যানের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস থাকে, তাই সেখানে কথা বলতে কোন সমস্যাই হয় না। তবে নভোচারীরা যখন চাঁদ/মঙ্গলে হাটতে বের হয়, তখন তাদের মাথায় বিশেষ হেলমেট থাকে, ঐ হেলমেটের ভেতরে বাতাস থাকে। যখন কোন নভোচারী কথা বলেন, তখন হেলমেটের ভেতরে অবস্থিত ডিভাইস সাইন্ড ওয়েভ কে রেডিও ওয়েভে রুপান্তরিত করে আশপাশে ছড়িয়ে দেয়। আর শ্রোতা নভোচারীর রিসিভার সেই রেডিও ওয়েভ রিসিভ করে সেটাকে হেলমেটের ভেতরে সাইন্ড ওয়েভে রুপান্তরিত করে শ্রোতার কানে পৌছে দেয়। উল্লেখ্য, রেডিও ওয়েভ এর চলাচলের জন্যে বাতাস দরকার নেই, এটি ভ্যাকুয়াম দিয়েই চলতে পারে। যোগাযোগটা হয় এমন জটিল পদ্ধতিতে। তো, এটা অন্তত যৌক্তিক বিষয় যে, “আসমান থেইক্যা সুমধুর আজানের ধ্বনি” ভেসে আসার কোন সম্ভাবনাই নেই। চাদে বায়ু নেই, তাই কোন শব্দও নেই।
এইবার হয়ত ত্যানাবাজ বেগ্যানী মুমিনরা এসে ত্যানা উৎপাদন করে বলবেন, “ওরে নাস্তেক, আজানের ধ্বনি তো মহাকাশ থেকে রেডিও তরঙ্গের আকারেই আইছিলো, আলহামদুলিল্লাহ”
না মুমিন ভাই, রেডিও তরঙ্গের আকারে কোন আজান কখনই ভেসে আসে নি। একটি মহাকাশ মিশনে যা যা হয়, নভোচারীরা যা বলে, যা শুনে, সবই নিয়ন্ত্রিত হয় পৃথিবীতে বসা নাসার একদল বিজ্ঞানী কর্তৃক। সবকিছুরই রেকর্ড থাকে। সুতরাং, আজান যদি নীল আর্মস্ট্রং শুনেই থাকতেন, সেটি অটোমেটিক নাসার সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যেতো এবং শত শত বিজ্ঞানীরাও শুনতে পেতেন। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়েছিলেন Apollo 11 মিশনে। তার আগে Apollo 10 মিশনে কিছু অদ্ভুত নয়েজ শুনতে পেয়েছিলেন নভোচারীরা। সেটি ছিলো শুধুই একটি উদ্ভট টাইপের বিরক্তিকর শব্দ যা তাদের নভোযানের দুইটি অংশের রেডিও ওয়েভের মাধ্যেমে যোগাযোগের ফলে সৃষ্ট। নভোচারীরা আশ্চর্য হলেও পরে নাসা বলেছে এটি স্বাভাবিক এবং ব্যাখ্যাও করেছে। সেই সাউন্ডটি পোস্টের শেষে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, লাল প্লে বাটনটি ক্লিক করে শুনে নিতে পারেন চাইলে।
নীল আর্মস্ট্রং এর আজান শোনার ঘটনাটি মুসলিমদের একটি জঘন্য মিথ্যাচার। মিথ্যা বলে নিজেদের ধর্মের মোজেজা দেখানো তাদের একটি মারাত্মক বদঅভ্যাস। ১৯৮০ সালে ইন্দোনেশিয়ান গায়ক একটি গান লিখেন “Gema Suara Adzan di Bulan”… এর অর্থ “চাঁদের বুকে সুমধুর আজানের ধ্বনি”। সেই থেকে শুরু… ইন্দোনেশিয়ার সংবাদপত্রগুলো এই ভুয়া খবর ছাপা শুরু করলো। মিশর এবং মালেশিয়াতেও ভাইরাল হয়ে গেলো সংবাদটি। বেচারা নীল আর্মস্ট্রং পড়লেন বিপাকে।
উইকিপিডিয়াতে নীল আর্মস্ট্রং এর পেজে একটু চোখ বুলিয়ে আসি।
Since the early 1980s, Armstrong has been the subject of a hoax saying that he converted to Islam after hearing the adhan, the Muslim call to prayer, while walking on the Moon. The Indonesian singer Suhaemi wrote a song called “Gema Suara Adzan di Bulan” (“The Resonant Sound of the Call to Prayer on the Moon”) which described Armstrong’s conversion; the song was discussed widely in various Jakarta news outlets in 1983.[146] Other similar hoax stories were seen in Egypt and Malaysia. In March 1983, the U.S. State Department responded by issuing a global message to Muslims saying that Armstrong “has not converted to Islam”.[147] However, the hoax was not completely quieted; it surfaced occasionally for the next three decades. A part of the confusion stems from the similarity between Armstrong’s American residence in Lebanon, Ohio, and the country Lebanon, which has a majority population of Muslims
মুসলিমদের উৎপাতে বেচারা নীল এমেরিকান সরকারের দ্বারস্থ হলেন। অবশেষে ১৯৮৩ সালে US State Department উক্ত তিন মুসলিম দেশসহ অনেক মুসলিম দেশের এম্বেসি ও কনসুলেটগুলোতে একটি স্টেটমেন্ট পাঠালেন এই মর্মে যে, নীল আর্মস্ট্রং চাদে কিছু শুনেন নি, তিনি মুসলিমও হন নি। সবই ছিলো গুজব।
সেই স্টেটমেন্টটি আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন। তুলে ধরছি।
P 04085 0Z MAR 83 ZEX
FM SECSTATE WASHD C TO ALL DIPLOMATIC AND CONSULAR POSTS PRIORITY BI UNCLAS STATE 056309
FOLLOWING REPEAT SENT ACTION ALL EAST ASIAN AND PACIFIC DIPLOMATIC POSTS DTD MAR 02.
QUOTE: UNCLAS STATE 056309 E.O. 12356: N/A TAGS: PREL, PGOV, US, ID SUBJECT: ALLEGED CONVERSION OF NEIL ARMSTRONG TO ISLAM
— — — ————————————-
REF: JAKARTA 3281 AND 2374 (NOT ..)
- FORMER ASTRONAUT NEIL ARMSTRONG, NOW IN PRIVATE BUSINESS, HAS BEEN THE SUBJECT OF PRESS REPORTS IN EGYPT, MALAYSIA AND INDONESIA (AND PERHAPS ELSEWHERE) ALLEGING HIS CONVERSION TO ISLAM DURING HIS LANDING ON THE MOON IN 1969. AS A RESULT OF SUCH REPORTS, ARMSTRONG HAS RECEIVED COMMUNICATIONS FROM INDIVIDUALS AND RELIGIOUS ORGANIZATIONS, AND A FEELER FROM AT LEAST ONE GOVERNMENT, ABOUT HIS POSSIBLE PARTICIPATION IN ISLAMIC ACTIVITIES.
- WHILE STRESSING HIS STRONG DESIRE NOT TO OFFEND ANYONE OR SHOW DISRESPECT FOR ANY RELIGION, ARMSTRONG HAS ADVISED DEPARTMENT THAT REPORTS OF HIS CONVERSION TO ISLAM ARE INACCURATE.
- IF POST RECEIVE QUERIES ON THIS MATTER, ARMSTRONG REQUESTS THAT THEY POLITELY BUT FIRMLY INFORM QUERYING PARTY THAT HE HAS NOT CONVERTED TO ISLAM AND HAS NO CURRENT PLANS OR DESIRE TO TRAVEL OVERSEAS TO PARTICIPATE IN ISLAMIC RELIGIOUS ACTIVITIES.
৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৫। নীল আর্মস্ট্রং Global Leadership Forum এর একটি সেমিনারে অংশ নিতে মালেশিয়াতে যান। সেখানে তাকে চাদে আজান শোনা এবং মুসলিম হওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে নীল এই বিষয়টিকে একটি গুজব বলে উড়িয়ে দেন।
নীল আর্মস্ট্রং তার বায়োগ্রাফি First Man: The Life of Neil A. Armstrong বইতেও বিষয়টিকে গুজব হিসেবে সনাক্ত করেন।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আজান শোনার পাশাপাশি অনেকে আবার এটাও দাবী করেন যে, আর্মস্টংরা চাঁদে ফাটল দেখে এসেছেন, এটাই প্রমান করে যে নবী মুহাম্মদ চাঁদ দুইভাগ করেছিলো। সেই বেকুবদের বলতে চাই, শুধু চাঁদ নয়, প্রায় সকল গ্রহ উপগ্রহেই ফাটল (crack) থাকে। পৃথিবীতেও অনেক বড় বড় ফাটল আছে। তার মানে কি পৃথিবীও দুই ভাগ হয়েছিলো? নূন্যতম ভুগোলটুকু জানলে এসব বলে মোজেজা দেখাতে চাইতেন না।
অনেকে আবার এই লেখাটা পড়ার পর মান ইজ্জত বাঁচাতে সরাসরি এটাই বলে দিবেন যে চাঁদেই কেউ যায়নি, সব ফেইক! তাদের উদ্দেশ্যে দুটো লিঙ্ক দিতেই হচ্ছে। দয়া করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এই লেখাটা এবং উইকিপিডিয়ার এই লেখাটাতে চোখ বুলিয়ে আসবেন। চাঁদে কেউই না গেলে নীল আর্মস্ট্রং এর আজান শোনার দাবী বাতিল হয়ে যায় আপনাদের হাতেই। তবে তারপরও এমনটা আমি মেনে নিতে পারি না। চাঁদে নীল আর্মস্ট্রংরা তো গিয়েছিলোই, সেটা বাদ দিয়ে বরং মঙ্গলে কি কি চাষাবাদ হচ্ছে, তা আলোচনার সময় এখন।
মুসলিম বন্ধুরা, উইকিপিডিয়াতে নীল আর্মস্ট্রং এর মুসলিম হওয়ার বিষয়টিকে বলা হয়েছে একটি Hoax. হোক্স অর্থ হচ্ছে ধাপ্পাবাজী। আর যারা এমনটি করে, তাদের বলা হয় ধাপ্পাবাজ। এখন আপনারাই বলুন, আপনারা কি?
ধাপ্পাবাজ হয়ে থাকবেন? নাকি মিথ্যা বলে ইসলামের মোজেজা দেখানো বন্ধ করবেন?
No comments