Header Ads

সর্বশেষ

জাকির নায়েকের মতো কিছু ধান্ধাবাজ কোরানের বিজ্ঞানের সন্ধান পেয়েছে


কোরান হাদিসে তো অনেক কিছুই পাওয়া যায় না, যাবে না। তখন মোল্লারা এই পাওয়ারটা কাজে লাগায়। এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই আছে। যেমন, একদলের মত অনুযায়ী অর্গান ডোনেশন হারাম, তো অন্যদলের মতে হালাল। ধরুন, কোরানে হয়তো লেখা থাকবে, “নিজের ক্ষতি করিও না”। এই আয়াত থেকে একদল মোল্লা আবিষ্কার করে ফেলবে অর্গান ডোনেশন হারাম। আবার, অন্য কোন সুরায় পাওয়া গেলো, “মানুষের উপকার করো”। এই আয়াত দিয়ে আরেকদল মোল্লা বুঝে নিবে অর্গান ডোনেশন হালাল।

আমি এই প্রসঙ্গটা টানলাম আপনাদের এটা বুঝাতে যে, কোরানে সাধারন দৃষ্টিকোন থেকে কিছু একটা লেখা থাকলেও ইসলামি পন্ডিতরা তা থেকে অসাধারন কিছু আবিষ্কার করবে। এই পদ্ধতিতেই জাকির নায়েকের মত কিছু ধান্ধাবাজ কোরানের অতি সাধারন অর্থবহ আয়াত, এমনকি ভুলভাল আয়াত থেকেও বিজ্ঞান উৎপাদন করে।

অর্গান ডোনেশন নিয়ে সংবাদটা দেখার সময়ই আমি বলে দিতে পেরেছিলাম যে, এটা কোরান হাদিসে থাকবে না সিওর। ঠিক এভাবেই, আপনিও একটু চিন্তা করলেই বলে দিতে পারবেন “সর্বযুগের জীবনব্যাবস্থা” ও “বিজ্ঞানীদের তথ্যের সোর্স” কোরানে কি আছে আর কি নেই। চিন্তা করার সময় শুধু খেয়াল রাখবেন মুহাম্মদ ও তার যুগের কিংবা অতীত যুগের লোকেরা বিষয়টা জানতো কিনা। চলুন, এ নিয়ে কয়েকটা কুইজ দেখিঃ

# কোরানে কি আছে নিউক্লিয়ার পাওয়ারের কথা?
আমার ধারনাঃ নেই।
# উটমুত্রের চিকিৎসা গুনাগুন কিংবা উটের বৈশিষ্ট্য?
আমার ধারনাঃ হাদিসে আছে জানি, কোরানেও থাকতে পারে।
# বিভিন্ন রোগের ভ্যাক্সিন সম্পর্কে কোন তথ্য?
আমার ধারনাঃ নেই।
# রকেট ও মহাকাশ সম্পর্কে তথ্য?
আমার ধারনাঃ নেই।
# মরুভুমির উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রাকৃতিক কৌশল?
আমার ধারনাঃ থাকা উচিত।

এই টপিকগুলো নিয়ে আমি কিন্তু ঘেটে দেখি নি একটা একটা করে। আন্দাজ করেছি মাত্র। এভাবে কোরান না দেখে যেকোন টপিকে আমি আন্দাজ করে বলে দিতে পারবো সেটা কোরানে আছে কি নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার আন্দাজ সঠিক বলে প্রমানিত হবে। সুত্র একটাইঃ

বিষয়টা মুহাম্মদের যুগে জানা ছিলো = কোরানে উল্লেখ থাকতেও পারে
বিষয়টা মুহাম্মদের যুগে জানার কথা নয় = কোরানে থাকবে না

এই সুত্রটা যদি সঠিক হয়, তাহলে এরকম একটা আদিম যুগের গ্রন্থ থেকে বিজ্ঞান পাওয়া যায় কিভাবে?

হ্যাঁ, এমন আদিম গ্রন্থ থেকেও বিজ্ঞান পাওয়া যেতে পারে। কোরান থেকে বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে চাইলে আপনার কিছু গুন থাকতে হবে। যেমনঃ

• কথার অর্থ টুইস্ট/বিকৃত করা।
• সাধারন দৃষ্টিকোণ থেকে বলা একটা কথার অসাধারন ব্যাখ্যা করে কথাটাকে অলৌকিক করে তোলা।
• তিলকে তাল বানানো। নরমাল কথাবার্তাকে চুইংগামের মত টেনে বর্ধিত করতে করতে সেটাকে বিজ্ঞান পর্যন্ত পৌছে দেয়া। তবে এজন্য আপনাকে বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন টার্ম/শব্দাবলিও জানতে হবে।
• ভুল কথার ভুলটা অস্বীকার করে বরং সেটাকেই সঠিকে রুপান্তরিত করা।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, একুশে বইমেলা থেকে আমি পকেটের টাকা খরচ করে সর্বপ্রথম যে বইটা কিনেছিলাম, সেটার নাম ছিলো “আল-কুরআনে বিজ্ঞান”। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত। বইটি মূলত “Scientific Indications in the Holy Quran” নামক আরেকটি ইংলিশ বইয়ের বাংলা অনুবাদ। যাহোক, এই বইটি পড়তে গিয়েই কোরান নিয়ে আমার টুকটাক সন্দেহের সুত্রপাত হয়েছিলো। আমার ধারনা ছিলো কোরানে বিজ্ঞান ভালোভাবেই রয়েছে এবং সেটা স্পষ্ট ভাষায়। জানার আগ্রহ থেকেই বইটি কিনেছিলাম। কিন্তু কোরানীয় বিজ্ঞানের আসল রুপটা আমাকে হতাশ করেছিলো। আমার আশা আকাঙ্ক্ষার সাথে কিছু মিলছিলো না। আমি খেয়াল করলাম, অতি সাধারন সব কথাবার্তাকে চতুর ব্যাখ্যা দ্বারা সেটাকে বিজ্ঞানময় বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও আমি তখন খাঁটি ঈমানদার ছিলাম, তবুও, কোরআনে বিজ্ঞান রয়েছে তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।

No comments