মডারেট মুসলিমনরা গণহত্যার ঘটনাকে বৈধতা দিতে কুযুক্তি!
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু মুসলিম এমন একটি গণহত্যার ঘটনাকে বৈধতা দিতে কিছু ফালতু কুযুক্তি দাঁড় করায়। চলুন, সেগুলোও জেনে নিই।
সবচেয়ে বেশি যেটি শোনা যায়, সেটি হচ্ছে, বনু কুরাইজা খন্দকের যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। তারা মুসলমানদের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলো।
অনেকে কোরানের একটি আয়াত এনে হাজির করবেন বনু কোরায়জার বিশ্বাসঘাতকতা প্রমাণের জন্য, সেটি হচ্ছে,
কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ হতে অবতরণে বাধ্য করলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন; ফলে তোমরা তাদের কতককে হত্যা করেছ এবং কতককে করছ বন্দী।
একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, বিশ্বাসঘাতকতার এই দাবীটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যদি বনু কুরাইযা সত্যিই কুরাইশদের পক্ষ নিতো, তাহলে আজকের পৃথিবীতে মুসলিম নামে কোন প্রাণীই অবশিষ্ট থাকতো না। উপরে, সুরা আহযাবের ১০ থেকে ১৬ পর্যন্ত আয়াতগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, সেখানে আমরা দেখেছি মুসলিমরা কত দূর্বল ছিলো এবং তাদের কি অবস্থা হয়েছিলো মক্কার সেনাবাহিনী দেখে। আল্লাহ সম্পর্কে বাজে ধারনা ও সন্দেহ, মুহাম্মদকে গালাগাল দেয়া হয়েছিলো। অনেকেই প্রাণ রক্ষার্থে পালাতে চাচ্ছিলো কিন্তু পথ পাচ্ছিলো না। এটা অত্যন্ত যৌক্তিক যে, সেদিন বনু কুরাইজা মক্কার সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে তাদের ঢুকতে দিলে সকল মুসলিমদের হত্যা করে ফেলা হতো। তাছাড়া, আহযাবের ১৪ নম্বর আয়াতটি পড়লেই বুঝা যায় সেদিন কোন যুদ্ধ হয়নি।
যদি শত্রুপক্ষ (মদীনা নগরীর) চারদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ করতো, অতঃপর তাদেরকে কুফুরীর আহবান করা হত, তবে তারা তাই করে বসত। তাতে তারা মোটেও বিলম্ব করত না।
সুরা আহযাব, আয়াত ১৪
বনু কুরাইজা বিশ্বাসঘাতকতা করে কুরাইশদের পক্ষ নিলে যুদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু কুরাইযা তা করেনি বলেই যুদ্ধ হয়নি।
উপরে সিরাত থেকে একটি রেফারেন্সও দিয়েছি, যেখানে আবু সুফিয়ান বলছে,
“Then Abu Sufyan said: “O Quraish, we are not in a permanent camp; the horses and camels are dying; the Banu Qurayza have broken their word to us and we have heard disquieting reports of them. You can see the violence of the wind which leaves us neither cooking-pots, or fire, nor tents to count on. Be off, for I am going“
অর্থাৎ, আবু সুফিয়ানের ভাষ্যমতে বনু কুরাইযা সেদিন কথা রাখেনি, কুরাইশদের সাহায্য করেনি।
বনু কুরাইজা কেনো সেদিন কুরাইশদের সাহায্য করেনি? তারা কি মুহাম্মদকে ভালোবাসতো? আনুগত্যের কারণেই তাদের এ সিদ্ধান্ত? জানতে হলে আমাদের আরেকটু ভেতরে ঢুকতে হবে। সিরাতে একটু নজর দিই,
On the night of the sabbath of Shawwal A.H.5 it came about by God’s action on behalf of His apostle that Abu Sufyan and the chiefs of Ghatafan send Ikrima b. Abu Jahl to B.Qurayza with some of their number saying that they had no permanent camp, that the horses and camels were dying; therefore they must make ready for the battle and make an end of Muhammad once and for all. They replied that it was the sabbath, a day on which they did nothing, and it was well known what had happened to those of their people who had violated the sabbath. ‘Moreover we will not fight Muhammad along with you until you give us hostages whom we can hold as security until we make an end of Muhammad; for we fear that if the battle goes against you and you suffer heavily you will withdraw at once to your country and leave us while the man is in our country, and we cannot face him alone.’ When the messengers returned with their reply Quraysh and Ghatafan said that what Nu’aym told you is the truth; so send to B. Qurayza that we will not give them a single man, and if they want to fight let them come out and fight. Having received this message B. Qurayza said: ‘What Nu’aym told you is the truth. The people are bent on fighting and if they get an opportunity they will take advantage of it; but if they do not they will withdraw to their own country and leave us to face this man here. So send word to them that we will not fight Muhammad with them until they give us hostages.’ Quraysh and Ghatafan refused to do so, and God sowed distrust between them, and sent a bitter cold wind against them in the winter nights which upset their cooking-pots and overthrew their tents.
IBN ISHAQ, SIRAT RASUL ALLAH (TRANSLATED BY A. GUILLAUME), P. 459
ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, কুরাইজা ও কুরাইশদের মধ্যে বার্তা চালাচালি হচ্ছিলো বার্তাবাহকের মাধ্যমে। বনু কুরাইজা প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মদকে অপছন্দ করতো এবং তার পতন চাইতো। তবে তারা মুহাম্মদের দলবলকে ভয় পেতো। কুরাইজার লোকজন কুরাইশদের উপর ভরসা করতে পারছিলো না এই জন্যে যে, যদি কুরাইশরা মাঝপথে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে মক্কায় ফিরে যায়, তাহলে কুরাইযার সবাইকে হত্যা করবে মুহাম্মদ। তাই, কুরাইজা চেয়েছিলো, কুরাইশরা তাদের কিছু লোক বনু কুরাইজার জিম্মায় রাখুক। তাহলে তারা কুরাইশদের সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু উত্তরে কুরাইশরা জানায়, তারা কোন লোক জিম্মায় রাখতে রাজি না। একথা শুনে বনু কুরাইজা অসম্মতি জানায় কুরাইশদের দলে যোগ দিতে। এর পর পরই আবু সুফিয়ান তার দলবল নিয়ে মক্কায় ফিরে যায়। সুতরাং, কুরাইজার মনের ভেতর যাই থাকুক, যুদ্ধের ময়দানে তারা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যায়নি কিংবা যেতে সাহস পায়নি।
তাছাড়া, উপরে আমরা বুখারির হাদিসের রেফারেন্সেও দেখেছি, উল্লেখ আছে সকল সিরাত গ্রন্থগুলোতেও, খন্দকের যুদ্ধে মক্কার সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পরও কারও মাথাব্যথা ছিলো না বনু কুরাইজা কে নিয়ে। ষড়যন্ত্র তো দূরের কথা। কিন্তু, মুহাম্মদ যখন সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মত আকাশ থেকে জিব্রাইল ফেরেশতার গায়েবী কন্ঠ শুনতে পেলেন যে, আজাইরা বসে না থেকে বনু কুরাইজাতে আক্রমণ করা লাগবে, ঠিক এই গায়েবি নির্দেশের পরই মুহাম্মদ দলবল নিয়ে আক্রমণটা করেছিলো। বাস্তবে যদি বনু কুরাইজা বিশ্বাসঘাতকতা করতোই, তাহলে গায়েবী নির্দেশ দরকার পরতো না, তার আগেই জিহাদীরা কুরাইজাতে হামলা করে বসতো।
গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে অনেকে আরও একটি খোঁড়া যুক্তি দিতে চান, সেটি হচ্ছে, গণহত্যার রায় দিয়েছিলেন সাদ বিন মুয়াজ, যার রায় কুরাইজার লোকেরা মেনে নিতে সম্মত হয়েছিলো। মুহাম্মদ শুধু পরে এই রায় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র।
এই সম্পর্কে যতগুলো হাদিস এসেছে, যেসব জায়গায় সম্মত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, মূল আরবী হাদিসগুলোতে কোথাও এটা স্পষ্ট করে বলা নেই যে কারা সম্মত হয়েছিলো (যদিও অনেকে ব্রাকেটের ভেতর বনু কুরাইজার কথা লিখে দেন) , সেটা বনু কুরাইজা নাকি তাদের অতীত মুসলিম মিত্র বনু আউস গোত্র যাদের দাবীতে মুহাম্মদ তাদের আউস নেতা সাদকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলো। সাদ বিন মুয়াযকে কেন, কখন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো, সে ঘটনা উপরে উল্লেখ করেছিলাম, এটাই অধিক যুক্তিযুক্ত যে, সম্মত হওয়া লোকেরা ছিলো আউস গোত্রের লোকজন। তাছাড়া, বনু কুরাইজাকে তাদের বিচারক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া বাস্তবস্মত এবং যৌক্তিক নয়, কেননা অপরাধী (মুহাম্মদের দৃষ্টিকোণ থেকে) নিজের বিচারক নিজে পছন্দ করে না। তাছাড়া, তখন ইতোমধ্যেই যেহেতু বনু কোরাইজা পরাজিত হয়ে নতি স্বীকার করেছে, তাই মোহাম্মদের কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না বনু কোরাইজার মতামত নিয়ে বিচারক নিয়োগ দেয়া।
আচ্ছা, তর্কের খাতিরে আমরা না হয় ধরেই নিলাম সাদ বিন মুয়াজ এর রায় মেনে নিতে সম্মত ছিলো বনু কুরাইজার লোকজন, কিন্তু উপরে উল্লেখিত বুখারীর হাদিস অনুযায়ী, সাদ যখন ঘোষণা করলেন যে সকল পুরুষদের গলা কেটে হত্যা করা হবে, নারী ও শিশুদের বন্দি করা হবে, ঠিক তখনই মুহাম্মদ বলে উঠেছিলো যে, সাদ সেই রায় দিয়েছে যা আল্লাহর রায় ছিলো। অর্থাৎ, মুহাম্মদ সাথে সাথে এই রায়কে সাপোর্ট দিলো। সাদ গণহত্যার রায় দিলেও একজন প্রকৃত ভালো মানুষ কখনও এই রায়কে সাপোর্টও করতে পারতো না, বাস্তবায়ন তো দূরের কথা।
আরও একটি দাবী শোনা যায় যে, সাদ তাওরাতের আইন অনুযায়ী এই রায় দিয়েছিলো। এটাও হতে পারে না। কেননা,
জিব্রাইল কি তখন ছুটিতে ছিলো? মুহাম্মদের বউদের হুমকি দিতেও আল্লাপাক কোরানে আয়াত পাঠাইতেন, আর এতোবড় একটি ঘটনায় একটা আয়াতও পাঠাইতে পারলেন না? নির্ভর করতে হলো তাওরাতে? নাকি কোরানের আয়াতে গণহত্যার কথা বলে মুহাম্মদ নিজ কাঁধে দায় নিতে চাচ্ছিলেন না? কোরান থাকতে তাওরাত কেন?
No comments