Header Ads

সর্বশেষ

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি

 


এক পাল্লায় মানুষের কাটা মাথা, আরেক পাল্লায় “একটি বিশেষ অনুভূতি”। মেপে দেখা গেলো, অনুভূতির পাল্লাটাই ভারী। এতোটাই ভারী যে অনুভূতির পাল্লা দড়ি ছিঁড়ে নিচে পরে যাওয়ার উপক্রম। হতেই হবে, সেটা যে সে অনুভূতি তো নয়। ধর্মীয় অনুভূতি। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি। যাতে কেউ আঘাত করলে হাজারটা মাথা কেটে ফেলে দেয়া যায়।

তবে ধর্মীয় অনুভূতির সংজ্ঞা এবং কি কি কারণে এই অনুভুতি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, তা এই পৃথিবীর কেউই সঠিকভাবে বলতে পারবে না। দয়ার সাগর, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবটিকে নিয়ে কেউ একজন হয়ত কার্টুন আঁকলো, অমনি অনুভূতিতে চোট লেগে গেলো। এই চোট আবার ঐ কার্টুনিস্ট এর রক্ত ছাড়া সেরে ওঠে না। দয়ালু সেই মহামানবটিকে গালি দেয়া কিংবা তার বিরুদ্ধে কিছু লেখাও একই ধরনের অপরাধ।

অনেকেই মনে করেন, অনুভূতির চোট রক্ত দিয়ে সারানো ঠিক না। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। এটা দয়াল নবীর আদর্শ না। তাদের ভুল প্রমাণ করতেই আজকের এই লেখা। ইতিহাস বলে, গালি দেয়ার অপরাধেও দয়াল নবী গালিদাতার কল্লা ফেলে দিয়েছিলেন। অতএব, আমরা বলতেই পারি, যিনি কার্টুনিস্টের কল্লা ফেলে দিলেন, তিনি মহামানবটির দেখানো সর্বোত্তম আদর্শই অনুসরণ করেছেন।

হয়তো কেউ নিরপরাধ পথচারীদের উপর ট্রাক উঠিয়ে দিলেন আল্লাহু আকবার বলে, তিনিও ভুল কিছু করেন নি। অনুসরণ করেছেন সেই মহামানবটিকেই।

মহামানবটির জীবন অনেক ঘটনাবহুল। কয়েক হাজার পোস্ট দিলেও সব লিখে শেষ করা যাবে না। আজকে আমরা ওসব ঘটনার মধ্য থেকে “ছোট্ট” একটি ঘটনা জানবো। যা আমাদের সাহায্য করবে ধর্মীয় অনুভূতি আরও গভীর হতে এবং উৎসাহিত করবে অপরের কল্লা ফেলে দিতে।

আজ আমরা দয়াল নবী কর্তৃক বনু কুরাইজা গোত্রের লোকেদের গণহত্যার কথা জানবো। আবার, বনু কুরাইজার গণহত্যা কেন, কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিলো, তা জানতে হলে আমাদের আরও জানতে হবে খন্দকের যুদ্ধ সম্পর্কে। তো চলুন বন্ধুরা, ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে আসি।

খন্দকের যুদ্ধ

“খন্দক” শব্দের অর্থ খাদ বা গর্ত। কিন্তু কেনো এমন নাম? যুদ্ধটা কি কোন গর্তের মধ্যে হয়েছিলো? না, তা নয়। বরং, গর্তের কারণেই যুদ্ধ হয়নি, তাই এমন নামকরণ। এটিকে আহযাব এর যুদ্ধ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

মুহাম্মদ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বনু কায়নুকা এবং ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে বনু নাদির নামক ইহুদি গোত্রদ্বয়কে মদিনা থেকে বিতাড়িত করেছিলো। এই ইহুদিরাই ছিলো ইয়াসরেব (মদিনা) অঞ্চলের আদিবাসী। কিন্তু মুহাম্মদ ইয়াসরেব এ গিয়ে নিজের দখলদারীত্ব প্রতিষ্ঠা করে, এবং বনু কায়নুকা ও নাদির এর মত গোত্রদের বিতাড়িত করে। তো, এর প্রতিশোধ নিতে বিতাড়িত কায়নুকা এবং নাদির গোত্রের নেতারা মক্কায় গিয়ে কোরাইশদের সাহায্য চায়। তাছাড়া কোরাইশরা ইতোমধ্যেই মুহাম্মদ এর উপর বিরক্ত ছিলো মুহাম্মদ কর্তৃক তাদের বাণিজ্য কাফেলাসমূহ লুটের কারণে। এরই ফলশ্রুতিতে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার সৈন্যবাহিনী মদিনা পুনোরোদ্ধার করার জন্য আক্রমণ করে।

আক্রমণকারী মক্কার সেনাবাহিনী ছিলো বিশাল! মদিনার ৩০০০ মুসলিম সৈন্যের বিপরীতে তাদের সৈন্য ছিলো ১০,০০০ সেই সাথে ৬০০ ঘোড়া এবং কিছু উট আরোহী সৈন্য। মক্কার এই বিশাল বাহিনী দেখে মুসলিম যোদ্ধারা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ে। তারা আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ এবং বাজে ধারনা করতে থাকে, মুহাম্মদকে ধোঁকাবাজ বলে আখ্যায়িত করে। তাদের অনেকেই প্রাণভয়ে পালাতে চাচ্ছিলো কিন্তু সে পথও পাচ্ছিলো না। মুসলিমদের অবস্থা হয়েছিলো এমনই করুণ।

Quran 33:10-16

তারা যখন তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপর থেকে আর তোমাদের নীচের দিক থেকে, তখন তোমাদের চক্ষু হয়েছিল বিস্ফোরিত আর প্রাণ হয়েছিল কণ্ঠাগত; আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম (খারাপ) ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলে। সে সময় মু’মিনগণকে পরীক্ষা করা হয়েছিল আর তাদেরকে ভীষণ কম্পনে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। আর স্মরণ কর, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা বলছিল- আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদেরকে যে ওয়া‘দা দিয়েছেন তা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্মরণ কর, যখন তাদের একদল বলেছিল- হে ইয়াসরিববাসী! তোমরা (শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে) দাঁড়াতে পারবে না, কাজেই তোমরা ফিরে যাও। আর তাদের একদল এই বলে নবী (সা)র কাছে অব্যাহতি চাচ্ছিল যে, আমাদের বাড়ীঘর অরক্ষিত অথচ ওগুলো অরক্ষিত ছিল না, আসলে পালিয়ে যাওয়াই তাদের ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। যদি শত্রুপক্ষ (মদীনা নগরীর) চারদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ করতো, অতঃপর তাদেরকে কুফুরীর আহবান করা হত, তবে তারা তাই করে বসত। তাতে তারা মোটেও বিলম্ব করত না। অথচ তারা ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়া‘দা সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে। বল, পলায়নে তোমাদের কোনই লাভ হবে না, যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর তাহলে তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।

সূরা আল আহযাব, আয়াত ১০ – ১৬

যাহোক, মক্কার এই বিশাল বাহিনী যখন মদিনায় এসে পৌছলো, তারা এক অভিনব সমস্যার সম্মুখীন হলো। তাদের সামনে বিশাল বিশাল সব গর্ত যা অতিক্রম করে তাদের বাহিনী সামনে এগোতে পারছিলো না। গর্তের এই সুরক্ষা স্তর মুহাম্মদ আগেই তৈরি করে রেখেছিলো সালমান ফারসীর পরামর্শে। এই টেকনিকটি ছিলো সম্পূর্ণ নতুন যা মক্কানরা কল্পনাই করতে পারে নি।

No comments