যারা মুক্তমনা হতে চান নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর পড়ুন
যার ইসলাম থেকে মুক্তচিন্তার দিকে আসতে চান বা যারা ইসলাম নিয়ে গবেষণা বা সমালোচনা করেন তাদের সাথে আজকে অবশ্যই…অবশ্যই…অবশ্যই… পাঠ্য একটি বই শেয়ার করবো । আমার প্রথমদিকে যখন ইসলাম নিয়ে সন্দেহ শুরু হয় তখন আমি ইসলাম এবং মুহাম্মদ কে নিয়ে আরো গবেষণা করতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করবো । তখন আমি একটি বই হাতে পাই নাম “নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর” লেখক আলী দস্তি । আলি দুস্তি ইরানের সর্বকালের সবচেয়ে প্রখর যুক্তিবাদী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম । তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, লেখক, সমাজ চিন্তক, বুদ্ধিজীবী ও সমাজ-ধর্ম বিশ্লেষক । আলি দস্তির জন্ম ১৮৯৬ সালে । লেখাপড়ার হাতে খড়ি স্থানীয় মাদ্রাসায় এবং পরে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইরাকে কারবালা ও পরে নাফাজ উভয় শহরের মাদ্রাসায় পড়তে আসেন । কারবালা হলো সেই প্রান্তর যেখানে নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র হোসেন বিন আলী শহীদ হয়েছিলেন এবং এখান থেকে ৭০ কিঃমিঃ দূরে নাফাজ শহরে মুহাম্মদের চাচাতো ভাই ও জামাতা আলি বিন আবু তালিব শায়িত আছেন । এখান থেকেই আলি দস্তি ইসলামিক দর্শন, ইতিহাস, আরবি এবং পারস্য ব্যাকরণ এবং ক্লাসিক্যাল আরবি সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন । এরপর দেশে ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকতায় যোগ দেন ও পরে রাজনীতিতে ।
তার লেখা বইটিই ছিলো আমার প্রথম মুক্তচিন্তা ভিত্তিক কোন বই পড়া । বইটি ইসলাম সম্পর্কে সেই শৈশব থেকে আমাকে যা গেলানো হয়েছিলো তার সবকিছুই পাল্টে দিয়েছিলো । বইটিতে খুব সরল ও সহজ ভাবে একেবারে নিরপেক্ষ জায়গা থেকে মুহাম্মদ কে বিচার করা হয়েছে । আলী দস্তি বইটিতে মুহাম্মদ কে অপ্রয়োজনে কোন নিন্দা করেননি আবার অলৌকিকত্বের অন্ধ চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দেননি । যেখানে যেখানে মুহাম্মদের প্রশংসা করার দরকার তিনি প্রশংসা করেছেন আবার যেখানে সমালোচনার দরকার তিনি করেছেন । আলী দুস্তির উদ্দেশ্য ছিলো একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে মুহাম্মদ কে বিচার করা যে, মুহাম্মদ আসলে কোন ঐশ্বরিক নবী ছিলেন কিনা । আলী দস্তির এই বইটির পিছন একটি ঘটনাবহুল কাহিনী আছে ।
১৯৭৪ সালের দিকে আলি দস্তি ফার্সি ভাষায় প্রকাশ করেন তার বই “বিশত ও সেহ সাল” । নবী মুহাম্মদের নবুয়তই নিয়ে সম্পূর্ণ বাস্তববাদী ও যুক্তিভিত্তিক লেখার জন্য বইটি শুধু ইরানে নয় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে হৈচৈ ফেলে দেয় । ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হতে থাকে বইটি নিয়ে । কিন্তু “বিশত ও সেহ সাল” বইটি ইরানের ধর্মীয় চিন্তাবিদদের ব্যাপক ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । বইটির জনপ্রিয়তার ফলে বইটি ইরানের বাইরেও প্রকাশিত হয় কিন্তু ইরান সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে । কথিত ইসলামি বিপ্লবের পরপরেই ইরানের খোমেনি সরকার আশি ঊর্ধ্ব আলি দস্তি কে গ্রেফতার করে একটি গোপন কারাগারে নিয়ে যায় । তার প্রগতিশীল লেখা বিশেষ করে “বিশত ও সেহ সাল” লেখার জন্য তার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ এনে বৃদ্ধ আলি দস্তি কে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয় । প্রহারের মাধ্যমে তার উরুর হাড় ভেঙ্গে দেওয়া হয় ।
এরপর গণমাধ্যমে আলি দস্তির আর কোন খবর পাওয়া যায়নি । লোকমুখে শোনা যায় তাকে নাকি একসময় ছেড়ে দেওয়া হয় কিন্তু তাকে বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি । তেহরানের একটি এলাকায় একটি বাগানের মধ্যে ছোট একটি কুড়ে ঘরে তাকে জনজীবন থেকে আড়াল করে তাকে বাকিটা জীবন গোপনে আটকে রেখে দেওয়া হয় । এরপর ১৯৮২ সালে একটি পাক্ষিক পত্রিকায় ছোট করে তার মৃত্যু সংবাদ ছাপানো হয় । এভাবেই সমাপ্ত হয় আলি দস্তির জীবন । কিন্তু তার লেখা বই “বিশত ও সেহ সাল” এর সমাপ্তি তখনো হয়নি । মৃত্যুর আগে আলি দস্তি তার বইটি ইংরেজি অনুবাদক এবং তার বন্ধু এফ.আর.সি. ব্যাগলি কে উপহার দিয়েছিলেন আর অনুরোধ করেছিলেন সম্ভব হলে অনুবাদ করতে । ব্যাগল আলি দস্তির মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর পরেই “বিশত ও সেহ সাল” বইটির অনুবাদ প্রকাশের উদ্যোগ নেন । ১৯৮৫ সালে লন্ডনে প্রথম বইটির অনুবাদ “23 Years: A study of the prophetic carrier of Muhammad” নামে প্রকাশ পায় । প্রকাশের পরেই বইটি ইসলামি আলোচনা সমালোচনার জগতে আবারো আলোড়ন সৃষ্টি করে । বাংলাদেশের লেখক আবুল কাশেম ও শৈকত চৌধুরী বইটির বাংলা অনুবাদ করেন । নাম রাখা হয় “নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর” । কিন্তু বইটির বিষয় বস্তু কারণে ও বাংলাদেশে ধর্মীও উগ্রবাদের কারণে বইটি বাংলাদেশে প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি । কিন্তু বইটির PDF কপি পাওয়া যায় । নিচে লিংক দেওয়া হলো । বইটি ইতিহাসে একটি অনবদ্য বই আশাকরি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা লাইন ভালো লাগবে ।
No comments