মুমিনদের শুকরের মাংসে এতো ভীতি কেন?
কয়েকদিন আগে FB তে একটি পোস্ট দেখলাম “মুসলিমরা শুকর কেনো খাননা ?” । একজন মুমিন সাড়ে তিন হাত লম্বা একটা লিস্ট দিয়ে বললেন যে শুকরের মাংস খেলে অমুক রোগ হয়, তমুক রোগ হয় ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার চেনা জানা কোন রোগ বা শারীরিক সমস্যাই বাদ যায়নি সেই তালিকা থেকে । কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো শুকরের মাংস যদি এতোটাই ক্ষতিকর হয় তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সারা বিশ্বে শুকরের মাংস নিষিদ্ধ করে দিচ্ছেনা কেনো ? শুকরের মাংস যদি এতোটাই বিষাক্ত হয় তাহলে তো মানুষের খাওয়া তো দূরের কথা মাংস রান্না গন্ধ নিলেই মারা যাওয়ার কথা । মুমিনদের এই শুকর ভীতি এবং রোগের তালিকা যে ভুয়া সেটা বোঝাতে আমি খুবই সিম্পল লজিকে কিছু কথা বলবো, আশাকরি বুঝতে পারবেন ।
শুকরের মাংস পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী খাওয়া মাংস এবং মানুষ শুকরের মাংস সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে খেয়ে আসছে । মানব ইতিহাসে খ্রিষ্টের জন্মেরো ৫০০০ খৃষ্টপূর্ব আগের পুরনো শুকর খামারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় । বর্তমান পৃথিবীতে যত মাংস খাওয়া হয় তার ৪৩% শুকরের মাংস । পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ শুকর খায় । তো… শুকরের মাংস যদি এতোই খারাপ হবে তাহলে তো মুসলিমরা বাদের পৃথিবীর অনন্য মানুষদের পৃথিবী থেকে অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা । আর মুসলিমদের হওয়ার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জাতি । কিন্তু আসলে কি তাই ? বাস্তবে তো আমরা দেখি তার উল্টো । আমি পৃথিবীর পাঁচটি দেশের তালিকা দিচ্ছি যে দেশের মানুষের গড় আয়ু পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী । দেশগুলো হলো মোনাকো, জাপান, সিঙ্গাপুর, আইস ল্যান্ড, হংকং । এগুলোর প্রত্যেকটি অমুসলিম দেশ এবং এসকল দেশে ভরপুর শুকর খাওয়া হয় । এর মধ্যে জাপান, সিঙ্গাপুর এবং হংকং এ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী শুকরের মাংস খাওয়া হয় । তো এতো বিষাক্ত জিনিষ খেয়ে এসব অমুসলিম কাফেররা কিভাবে এতো দীর্ঘায়ু লাভ করলো ? হায়াৎ মউৎ নাকি আল্লার হাতে । তাহলে এটা কেমন কথা যে শুকর খাওয়া অমুসলিম কাফেররা বেশী হায়াৎ পাচ্ছে আর মুসলিমরা অকালে পটল তুলছে ?
এখানে মুমিনরা আরেকটা খুবই হাস্যকর যুক্তি দেখান যে, শুকরের সেক্স লাইফ নাকি ভালো না। শুকর নাকি বিভিন্ন বিকৃত যৌনাচার করে আনন্দ নেয়। এজন্যই তারা শুকর খান না, খেলে নাকি তারাও শুকর হয়ে যাবেন। আর ইউরোপ আমেরিকাতে নাকি মানুষ শুকর খেয়েই ফ্রি সেক্সের দেশ হয়ে গেছে (হাইরে মুমিন )। এই যুক্তিটি প্রথম উগলেছেন আমাদের সবার চেনা সেই চাপাবাজ ডাক্তার। নামটা নিশ্চয় বলা লাগবে না। যাইহোক… আমি বহু খোঁজাখুঁজি করেও আজো নির্ভরযোগ্য কোন সোর্স পাইনি যেটা জাকির নায়েকের এই যুক্তিকে সমর্থন করে। কোন এনিমেল সাইন্সই বলে না যে শুকর কোন বিকৃত যৌনজীবন যাপন করে। শুকরের সেক্স লাইফ আর দশটা প্রাণির মতোই। তবে… ধরুন তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে শুকল লুইচ্চা, লম্পট আর শুকর খেলে মুমিনরাও শুকর হয়ে যাবে। তাহলে এই যুক্তিতে মুমিনদের তো খরগোশও খাওয়া উচিৎ না। কারণ খরগোশ তাদের নিজেদের শিশু বাচ্চাদের জীবন্ত খেয়ে নেয়। তাহলে খরগোশ খেয়ে কি কোন মুমিন তার নিজের বাচ্চার দিকে ঝাল লবন নিয়ে তেড়ে গেছে? হাদিসে আছে মুহাম্মদ খরগোশের মাংস খেতো। তো… খরগোশ খেয়ে কি মুহাম্মদের ভিতর এরকম কোন স্বভাব ছিলো? না… খরগোশ খেলে আপনি খরগোশ হবেন না। ঠিক তেমনি আপনি শুকর খেলেও শুকর হবেন না। তাই জাকিরের মতো চাপাবাজদের খপ্পরে পড়বেন না।
এবার সোজা কথা বলি । ইসলামে শুকর হারাম করার যৌক্তিক কোন কারণ নেই । তাই মুমিনদের বলবো আপনারা শুকর খাননা বলে শুকর খেলে এইডস হয়, ক্যান্সার হয় এইসব মিথ্যাচার বন্ধ করেন । কারণ মুহাম্মদ বলেন বা আল্লা, তাদের আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে কোন টেনশন নেই । আল্লার তার ইগো নিয়ে টেনশন আর এই ইগো থেকেই শুকর হারাম করা । যেমন কোরানের সূরা বাকারার ১৭৩ আয়াত খেয়াল করেন
“তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়।”
এখানে আল্লাহ বলছেন যে মুসলিমদের জন্য শুকরের সাথে সেই সকল জীব জন্তুও হারাম যেগুলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয় । এখন নিশ্চয় বলবেন না যে “যে মুরগী আল্লা বাদে অন্য কারো নামে জবাই করা হয় সেই মুরগী খেলে এইডস হবে, ক্যান্সার হবে ইত্যাদি ইত্যাদি” ? মুরগী আল্লার নামে জবাই করেন আর করিম মণ্ডলের নামে জবাই করেন, মুরগী মুরগীই । ওটার স্বাদে বা পুষ্টিগুণে কার নামে জবাই তার কোন প্রভাব পড়ে না । সুতরাং এখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এটা হারাম করার কারণ স্বাস্থ্য নয় বরং আল্লার ইগো । মুমিনদের ধারণা ইসলামে শুকরের মাংস হারাম করার কারণ আল্লা স্বাস্থ্য সচেতন । কিন্তু ঘটনা সেটা না । এটা এসেছে ইহুদী ধর্ম থেকে । মুসলিমদের অনেক আগে থেকেই ইহুদী ধর্মে শুকর নিষিদ্ধ ছিলো আর ইসলামের ৯৫% এসেছে ইহুদী ধর্ম থেকে তাই এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে শুকর না খাওয়ার এই রীতিটাও ইসলামে সেখান থেকে এসেছে ।
সকল খাবারেরই কিছু আপ-সাইড আর ডাউন-সাইড আছে । তবে তারমানে এই না যে সেগুলো হারাম করতে হবে । যেমন বিশ্বজুড়ে ডাইবেটিসের মহামারি দেখা দিয়েছে । আর চিনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিষের থেকে কম কিছু নয় । সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে চিনির বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং ডাক্তাররা মিষ্টি থেকে বিরত থাকতে সকল কে নির্দেশ দেন । আবার আমাদের দেশে ডাক্তারের কাছে গেলে ৮০% ক্ষেত্রে ডাক্তার সবার আগে যে মাংসটা খেতে নিষেধ করে সেটা হলো গরুর মাংস । আবার সাদা লবণ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । কিন্তু… তারমানে এই না যে আসমানি কিতাব এনে চিনি, গরুর মাংস, সাদা লবণ এগুলো হারাম করতে হবে । নিয়ম মাফিক পরিমিত পরিমাণে আপনি এগুলো খান আপনার কোন সমস্যা হবে না । হ্যাঁ… আপনার কোন খাবার রুচিতে নিতে নাও পারে । আপনি সেগুলো খেয়েন না । যেমন আমার দুই মামাতো ভাই আছে যারা একেবারে সুস্থ সবল । কিন্তু তারা গরুর মাংস খায় না । কারণ তাদের রুচিতে নেয় না । খানাবাড়ি গিয়ে আমরা খাওয়া শুরু করি আর তারা “ভাই… আমি ছাগল । ভাই… আমি ছাগল” বলে চিৎকার করে । তারা না খাক, কোন সমস্যা নেই । তেমনি আপনাদেরো শুকর রুচিতে না নিলে খেয়েন না বা সিম্পলি বলেন “ভাই… কারণ জানি না তবে ধর্মে নিষেধ আছে তাই খাই না।” কোন সমস্যা নেই । কিন্তু জাকিরের উগলানো চাপাবাজি গিলে, শুকরের মাংস খেলে কৃমি থেকে শুরু করে এইডস সব রোগ হয় এই মিথ্যাচার করা বন্ধ করেন । অনেকে আবার বলে শুকর নোংরা পরিবেশে থাকে তাই শুকর খাওয়া যাবে না । শুকর ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে এজন্য তারা কাদা পানির ভিতর থাকতে ভালোবাসে । কিন্তু এটা তাদের মাংসের পুষ্টিগুণে কোন প্রভাব ফেলে না । তবুও যারা বলেন যে শুকর নোংরায় থাকে বলে তা খাওয়া যাবে না তাদের আমি প্রশ্ন করতে চাই আপনারা যে মাছ খান সেই মাছ কোথায় থাকে ? মাছ পানিতে থাকে এবং তারা পানির নিচের আবর্জনা খেয়ে বেচে থাকে । পুকুরে যে মাছচাষ করা হয় সেই মাছ কে কি খাবার দেওয়া হয় তা কি আপনি জানেন ? পুকুরের মাছ কে ফার্মের মুরগীর বিষ্ঠা খাবার হিসেবে দেওয়া হয় । কিন্তু বিষ্ঠা খাওয়ার ফলে মাছের পুষ্টিগুণে কোন প্রভাব পড়ে না । কিন্তু সেই বিষ্ঠা খাওয়া মাছগুলো যখন মুমিন ভাইয়েরা বাজার থেকে এনে রান্না করে হালাল বলে খান তখন আপনার পরিচ্ছন্নতা জ্ঞান কোথায় যায় ?
No comments