Header Ads

সর্বশেষ

মুসলিমদের আবেগ শুধু মুহাম্মদকে ঘিরে!


লালমনিরহাটের পাটগ্রামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার সেই ঘটনাটিকে নিয়ে অনেক মডারেট এবং বংশপরম্পরায় পাওয়া মুসলিমরা বেশ কিছু হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে মুহাম্মদের আমল থেকে শুরু করে কোরআন কিংবা হাদিসের কোথাও কি লেখা আছে যে ধর্ম অবমাননার দায়ে কাউকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা যাবে?

তবে পুড়িয়ে ফেলা ওই যুবকের বিষয়ে বিস্তারিত যাওয়ার আগে আমি ১৪শ বছর আগের একটি নিশ্বংস হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু করতে চাই:
তৎকালীন সময়ে এর চেয়েও বর্বরভাবে অমুসলিমদেরকে গুপ্তহত্যা করা হতো। শুধুমাত্র কবিতা লেখার অপরাধে অন্ধকার রাত্রীতে ঘরে ঢুকে পাঁচ সন্তানের জননী ‘‘আসমা বিনতে মারওয়ান’’ এর স্তন্যপানরত দুগ্ধপোষ্য শিশুকে স্তন্য থেকে সরিয়ে ঘুমন্ত কবি আসমাকে হত্যা করা থেকে শুরু করে ১১৫ – ১২০ বছর বয়সের বৃদ্ধ কবি কাব ইবনে আশরাফের ঘরে মেহমান হিসেবে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে তাকে হত্যাসহ এমন বর্বরোচিত কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যা করা হতো। আর আজ এগুলো বললেই আমাদেরকে নাস্তিক, ধর্মবিরোধী, খারাপ মানুষের তকমা লাগিয়ে মা-বোন তুলে গালাগালি করা হয়। ভাই গালাগালি না করে ১৪শত বছরের ইতিহাসটা একটু ভালো করে পড়ুন।

এবার আসুন আজকের স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিয়ে: এরা এই স্ট্যাটাসগুলো দিয়েছে মূলত দুইটি কারণে, যার একটি কারণ হচ্ছে নিজেকে এসব জঘন্য অপরাধ থেকে সুরক্ষিত অবস্থান বা সেভ পজিশন নিয়ে যাওয়া, অর্থাৎ আমরা ইসলাম নিয়ে যত বাড়াবাড়িই করি না কেন, এগুলোকে প্রশ্রয় দেই না!

ঠিক যেমনি ভাবে কোরআনের সূরা: (৪) আন-নিসা’য় বলা হয়েছে:
وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। [ সুরা নিসা ৪:৯৩ ]
এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত একটু পরে বলছি।

তার আগে দ্বিতীয় কারণে যাই:
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, তিনি নিজে জিন্স প্যান্ট আর শার্ট পড়েও কোরআন এবং হাদিস সম্পর্কে এতটাই জ্ঞান রাখেন যে, এখন নিজেকে আলেম-ওলামাদের কাতারে নিয়ে যাওয়া, অর্থাৎ কোরআন-হাদিসের খুটিনাটি সবই তার জানা। আর সেই বিশ্বাস থেকেই এটিও ঘোষণা দিয়ে দেওয়া যে, কোরআন-হাদিসের কোথাও এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা কিংবা পুড়িয়ে ফেলার কথা বলা নেই।

সেইসব বংশপরম্পরায় পাওয়া মুসলিম ভাইদেরকে আমি প্রথমেই দ্বিতীয় বিষয়টি অর্থাৎ নিজেকে আলেম-ওলামা ভাবার বিষয় নিয়ে যদি এক কথায় বলতে চাই, তাহলে এভাবে বলবো যে, আপনারা কোরআন কিংবা হাদিসের কিছুই জানেন না! (ভুল ভাবার কিছুই নেই, আগেই বলে রাখি যে আমিও তেমন কিছু জানি না)।

আপনারা শুধু সূরা আল ফাতিহা, সূরা আল ইখলাস, সূরা আল ফালাক, কাওসার, মাউন, আসর, সূরা লাহাব এবং সূরা নাস সহ নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সূরা ও দোয়া ছাড়া আর কিছুই জানেন না। আর যেই কয়টি সূরা এবং দোয়া জানেন এগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপট জানবেন তো দুরের কথা সূরা গুলোর অর্থই বলতে পারবেন না। অথচ নিজেকে কোরআন হাদিসের আলেম-ওলামা দাবি করে আমাদের জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছেন!!

এবার আসি প্রথম বিষয়টি নিয়ে: এখানে আপনারা বোঝাতে চেয়েছেন যে আপনারা এই ধরনের হত্যাকান্ডে কখনোই সমর্থন করেন না, অথচ ফ্রান্সে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাত্র কয়েকদিনেই পর পর চারজন মানুষকে হত্যা করে জিহাদ বলে চালিয়ে দেওয়ার সময় তো আপনাদের চোখ থেকে ঘুমই ভাঙে না!! এগুলো কি আপনাদের চোখে পড়ে না? তারা কি মানুষ না? নাকি অপনাদের অনুভূতিই সব?

আসলে আপনাদের জায়গায় থাকলে আমিও একই কাজ করতাম। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে এক মুসলমান আর এক মুসলমানের দোষ গোপন রাখা একটি মানবীয় গুণ এবং সওয়াবের কাজ।
উদাহরণ: وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْداً في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ [মুসলিম ২৫৯০, আহমদ ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫]
তারমানে এটি আপনাদের শরিয়তি দায়িত্ব।

এবার আসা যাক এই লেখাটির মূল পয়েন্ট এ।
আমি প্রথমেই দুটি কথা বলেছি, যার একটি হলো: মডারেট অথবা বংশপরম্পরায় পাওয়া ইসলাম। আর একটি হচ্ছে কোরআনের সূরাগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপট এবং এর অর্থ না জানা।

বংশপরম্পরায়: আমাদের পূর্বপুরুষ মুসলিম তাই আমরা মুসলিম, এটিই মূলত বংশপরম্পরায় পাওয়া। আর এই বংশপরম্পরায় পাওয়া ইসলাম এর কারণেই আমরা এসব নিয়ে খুব বেশি একটা কথা না বলতেই পছন্দ করি। পূর্ব প্রজন্ম যা বলে গিয়েছে সেগুলোকেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। আর সেই অন্ধ-বিশ্বাসে যদি কেউ আঘাত হানে, তাহলে তাকে মিনিটের মাথায় হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করি না।

নাযিলের প্রেক্ষাপট এবং অর্থ: এই দুইটা জিনিস না জানাই হচ্ছে আমাদের অজ্ঞতার মূল কারণ! হ্যাঁ শুনতে খারাপ শোনা গেলেও এটাই সত্য!! বর্তমানে আমরা ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন বক্তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক এবং উগ্রবাদকে উৎসাহ দেয় এমন বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করি। এটা মোটেও ঠিক নয়। কেননা তারা যা বলে সেগুলো একটিও মিথ্যা কথা না বা কোরআন কিংবা হাদিসেব বাইরে থেকে বলে না। কিন্তু এসব কথাগুলো শুনে আমাদের কাছে মনে হয় এগুলো কোরআন হাদিসের কথা না। আর একারণেই আমি বলেছি যে, আমরা সূরা নাযিলের প্রেক্ষাপট এবং অর্থ কিছুই জানি না। শুধু আরবি পড়ি আর কোথাও কোনও সমস্যা হলে হুজুরদের কছে দৌড়াই। তারাও উপরে আমি যে সুরা নিসা ৪:৯৩ নং আয়াতটির কথা বললাম, এমন কিছু অংশবিশেষ শুনিয়ে দেয়, আর আমরাও সাথে সাথে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আত্মায় শান্তি বর্ষিত করে ঘুমিয়ে পড়ি। অথচ এর আগে পেছনের কিছুই জানি না।

আসুন ওয়াজ মাহফিলে কিংবা হুজুরদের দেওয়া বক্তব্যের সাথে কোরআন হাদিসের কিছু কথা মিলিয়ে নেই:
ইসলাম ধর্মকে অবমাননার শাস্তির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের বর্ণনা-
مَلْعُونِينَ ۖ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا [٣٣:٦١] سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ ۖ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا [٣٣:٦٢]
“অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাদেরকে ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে চলে গিয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৬১-৬২)
এগুলোই মূলত আমরা ওয়ার মাহফিলে হুজুরদের মুখে শুনে থাকি।

ইবনে খাতাল রাসূলের প্রতি কটূক্তি করেছিল, সেজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ مِغْفَرٌ ، فَقِيلَ لَهُ : هَذَا ابْنُ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ ، فَقَالَ : ” اقْتُلُوهُ “
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করে মাত্র মাথায় যে হেলমেট পরা ছিল তা খুললেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনে খাতাল (বাঁচার জন্য) কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। রাসুল (সা.) বললেন, (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা করো।’ (বুখারী ১৮৪৬, মুসলিম ৩৩৭৪)
অথচ সেই সময়ে কেউ যদি কাবা ঘরের গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো, তাহলে তাকে হত্যা করার নিয়ম ছিলনা। কিন্তু মুহাম্মদ তাকেও খুন করছে।

আরোও একটি উদাহরণ: পরিচ্ছেদঃ ১৮৯০. আল্লাহ‌ তা আলার শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না:
باب لاَ يُعَذَّبُ بِعَذَابِ اللَّهِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ عَلِيًّا ـ رضى الله عنه ـ حَرَّقَ قَوْمًا، فَبَلَغَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحَرِّقْهُمْ، لأَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللَّهِ ‏”‏‏.‏ وَلَقَتَلْتُهُمْ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ ‏”‏‏.‏
২৮০৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইকরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আলী (রাঃ) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে তিনি বলেন, ‘যদি আমি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহ নির্ধারিত শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করে ফেল।’

এখানে মাত্র কয়েকটি উদাহরণ টানলাম। কোরআন এবং হাদিসে এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এরপরও মডারেট অথবা বংশপরম্পরায় পাওয়া মুসলিমরা যখন বলে যে কোরআর-হাদিসের কোথাও কি কাউকে এভাবে হত্যা করার কথা বলা আছে?
আসলে তাদেরকে আমার ধর্মান্ধ, দুর্বল অথবা অজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।

আমি একটা জিনিস বুঝিনা, আপনাদের অনুভূতির সবকিছু ইসলামকে ঘিরেই কেন?
পৃথিবীর অন্য কোনও সমস্যা কি আপনাদের চোখে পড়ে না?
কোথায় কার চিত্র অংকন করলেন সেই বিতর্কের জের ধরে পৃথিবীকেই হাশরের ময়দানে পরিণত করছেন। অথচ আপনারাই বলেন যে মুহাম্মদের আসল চেহারা কেউই বলতে পারবে না, কারণ তার কোথাও কোনও ছবি নেই। তাহলে কোথায় কে কোন ছবি আঁকলেন, সেটি যে মুহাম্মদেেই ছবি এটিই বা কেন বলছেন?
কোরআন অবমাননাকারীকে হত্যা করেন অথচ সেই কোরানের হাফেজরাই যে ছোট ছোট শিশুদের বলাৎকার করেছে, আপনারা সেগুলো কি দেখেন না?
নাকি আপনাদের আবেগ শুধু মুহাম্মদকে ঘিরে?

No comments