পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের সমালোচনা
তৎকালীন আরব সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, সংস্কার, প্রথা, ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষদের মনে নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মদের এই ধরণের কথাবার্তা আঘাত করেছিল। আজকে অসংখ্য মুসলিমান যখন দাবী করেন, অমুকে ইসলামের সমালোচনার মাধ্যমে তার বা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে, তারা ভুলে যান, হযরত মুহাম্মদ নিজেই ধর্মের সমালোচনা করেছিলেন। কারণ হযরত মুহাম্মদ মনে করেছিলেন, তৎকালীন সময়ে প্রচলিত পৌত্তলিক ধর্মগুলো ভুল এবং মিথ্যা। আজকের যুগে তাই কেউ যদি মনে করেন, তার সময়ে প্রচলিত ধর্ম বা ধর্মসমূহ মিথ্যা বা ভুল, তারও সেই সকল ধর্মকে ভুল প্রমাণ করার অধিকার থাকা উচিৎ। ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেয়া বা প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে হযরত মুহাম্মদকেও একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব।
ধর্মের সমালোচনার একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সুদূর অতীতে প্রাচীন গ্রিসে, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে দার্শনিক ‘মেলোসের নাস্তিক’ দিয়াগোরাসের (Diagorus ‘the Atheist’ of Melos) মতবাদ থেকে শুরু করে, প্রাচীন রোমে, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রচিত দার্শনিক লুক্রেশিয়াসের রচনা De Rerum Natura (On the Nature of Things) প্রভৃতি ধর্মের সমালোচনার আদিমতম নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ধর্মের সমালোচনার বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষায় ধর্মের বিচিত্র সব সংজ্ঞা ও ধারণা পাওয়া যায় যেগুলো একটি আরেকটির থেকে নানাভাবে আলাদা। ধর্মীয় মতবাদসমূহের মধ্যে একেশ্বরবাদ, বহু-ঈশ্বরবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, নিরীশ্বরবাদ প্রভৃতি শাখা-প্রশাখার এবং খ্রিষ্ট ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, তাওইজম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং এরূপ অসংখ্য সুনির্দিষ্ট বিচিত্র মতবাদের অস্তিত্ব থাকায়, প্রায়শই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না, যে ঠিক কোন ধর্মীয় মতবাদকে উদ্দেশ্য করে সমালোচনা করা হচ্ছে।
পৃথিবীর সব স্বতন্ত্র ধর্মই নিজেদের মতবাদের সত্যতা দাবি করে এবং অন্য সব স্বতন্ত্র ধর্মীয় মতবাদসমূহকে নাকচ করে। সমালোচনাকারীরা ধর্মের সমালোচনা করার সময় সাধারণত ধর্মগুলোকে সেকেলে, অনুসারী ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর, সমাজের জন্য ক্ষতিকর, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ, অনৈতিক আচরণ ও প্রথার উৎস এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
ধর্মের সমালোচনা (Criticism of religion) বলতে বোঝানো হয় ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় মতবাদ, ধর্মের যথার্থতা ও ধর্মচর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা, রীতি-নীতি এবং তৎসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক ঈঙ্গিতসমূহের গঠনমূলক সমালোচনা।
No comments