বনু কুরাইযা গোত্র উপর ইসলামী অত্যাচার
মদিনার বনু কুরাইযাকে কচুকাটা করা হয়েছিল মামুলি চুক্তিভঙ্গ করার অভিযোগে! যদিও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগটি যে ধাপ্পাবাজী তা হাদিসের বর্ণনাতেই ধরা পড়ে। যদি কোন মানুষকে তার অপরাধের প্রমাণ হিসেবে বলা হয় যে সেই ব্যক্তি জাদু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল সেটাকে কেমন করে আজকের যুগে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করা যায়? ইতিহাস আরব্য রজনীর গল্প না।বনু কুরাইযা গোত্রকে নি:শেষ করা হয়েছিল চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে, গোত্রের প্রধান কা’ব ইবনে আসাদ অন্য গোত্রের হুয়াই ইবনে আখতাবের জাদুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চুক্তিভঙ্গ করতে সম্মত হয়। এরচেয়ে মিথ্যাচার, ধাপ্পাবাজী ধর্মের ইতিহাসে বোধহয় দ্বিতীয়টি নেই।
খন্দকের যুদ্ধের পর পর ৬২৯ সনের এপ্রিল মাসে বনু কুরাইযা গ্রোত্রের উপর নবী ও তার সাহাবী বাহিনী আক্রমণ করেন। দুনিয়ার কোন ইসলামিস্টই এই ঘটনাকে এড়াতে পারেন না, বলতে পারেন না যে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা আজকাল যেমন বলতে পারেন ৭১ সালে এখানে তেমন কিছুই ঘটেনি, তেমনটা ইসলামিস্টরা দাবী করতে পারেন না কারণ এসব হাদিস, বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থ এবং স্বয়ং কুরআন শরীফে এর উল্লেখ আছে। কুরআনের তাফসিরে এর ব্যাখ্যা আছে। এজন্য বনু কুরাইযাসহ ইহুদী আরো নানা গোত্রের উপর নবী মুহাম্মদের হামলা, অত্যাচারকে ইসলামী দুনিয়া অস্বীকার করতে না পেরে একে যৌক্তিক প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়। তারা বুঝাতে চায় ঐ হামলাগুলো করা হয়েছিল ইহুদীদের গাদ্দারী, বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই! আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় কারণ আমি ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করতে পেরেছি। আমি নাস্তিক না হলে খুব সহজেই এইসব গণহত্যাগুলোর সপক্ষে নানা রকম যুক্তি খুঁজে পেতাম!
উপরে বলা হয়েছে বনু কুরাইযা গোত্রের প্রধানকে জাদু করে নাকি চুক্তি ভঙ্গ করিয়েছিল অন্য গোত্র। ইসলামের কি চরম মিথ্যাচার! মদিনাতে বসবাস করে সেই সময় যখন হযরত মুহাম্মদের প্রতাপ-প্রতিপত্তি সমগ্র আরবদেশে প্রতিদ্বন্দিহীন কেমন করে ৮০০-৯০০ জনের একটা গোত্র (তাদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু) বিশ্বাসঘাতকতার সাহস করতে পারে? তবু যদি প্রমাণ দেখাতে পারতো মেনে নেওয়া যেতো। “জাদু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চুক্তি ভঙ্গ করা” একমাত্র মুসলিম ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবে না। ঠিক আছে তবু মুসলিমদের দাবীকেই মেনে নিলাম। বনু কুরাইযা গোত্রের প্রধান জাদু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। কিন্তু তার সাজা কি পাবে নিরপরাধী শিশুরা? যারা এখনই “শিশুদের হত্যা করা হয়নি” বলে চেঁচামেচি করবেন তাদের জ্ঞাথার্থে জানাই যে, লিঙ্গের অগ্রভাবে কেশ উঠেছে কিনা সেটা দেখেই সাবালক নির্বাচনা করা হয়েছিল! নারীদেরকে গণিমতের মাল হিসেবে মুজাহিদদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। এই নারীদের নবী ও তার দলবল নিজেদের ভোগ করার জন্য রেখেও বাকীগুলোকে বিক্রি করতো নগদ অর্থ লাভের জন্য। সেই অর্থে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের বিনিয়োগ করা হতো। আজকে বেকো হারাম স্কুলের ছাত্রীদের লুট করে বিক্রির যে সংবাদ আমরা পেয়েছিলাম, ইসলাম সম্পর্কে না জানার কারণেই “ইহা সহি ইসলাম নয়” বলেছিল অনেকেই। অথচ বেকো হারাম মোটেই ইসলাম বিরোধী কিছু করেনি।
বনু কুরাইযা গোত্রের উপর হত্যাযজ্ঞ চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে। জানা যায় ৭০০-৯০০ মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। যে সব পুরুষদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের স্ত্রীদের সেইদিনই মুমিন পুরুষরা ভোগ করে নির্বিচারে। বুন কুরাইযা গোত্রের এক নারী যার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল সে জানায় তাকেও হত্যা করা হোক কারণ এখন তার বেঁচে থাকার কোন অর্থ থাকে না। মহান ইসলাম তার মৃত্যুকে কবুল করে নেন। হযরত আয়েশা এই নারী সম্পর্কে বলেছিলেন, সেই ইহুদী নারীটির হাসিমুখে মৃত্যুকে গ্রহণ করার দৃশ্যটি তিনি কোনদিনই ভুলতে পারেননি…।
আসলে বনু কুরাইযার মত হতভাগ্যদের কথা যুগে যুগে ইসলামই ভুলতে দেয় না। পাকিস্তানের নিস্পাপ শিশুদের কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। আমার নিজের একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি তার কথা ভেবেছি। ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে যে আমি বা আমার কন্যা সেখানে ছিলাম না। কিন্তু আমি জানি এসব সময়িক সৌভাগ্য কেবল মাত্র। ইসলাম এইদেশকেও খাবে, হাড়-মজ্জা কামড়ে খাবে। পাকিস্তানের তালেবান হামলা বনু কুরাইযা গোত্রের কথা বার বার স্মরণ করে দিয়েছে আমাকে। ইসলামিস্টরা বনু কুরাইযা গোত্রের হামলাকে জায়েজ করতে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে আসলে তাদের নিজেদের মানুষ্যত্বহীনতাকেই প্রকাশ করে ফেলে! কারণ গণহত্যার কোন সাফাই হয় না। গণহত্যার কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না। একমাত্র ইসলাম ত্যাগ ভিন্ন তাই বনু কুরাইযা গোত্রের হামলাকে সমর্থন করতে পারে না। পাকিস্তানের ঘটনায় অলরেডি ইন্ডিয়াকে আনা হয়েছে। এসব আসলে হিন্দুদের কাজ! তফাতটুকু খেয়াল করুন, আজ কিন্তু ইসলাম পাকিস্তানের পেশোয়ারের সেনাসদস্যরা বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে হামলা বলে পার পাচ্ছে না, তাই হিন্দুদের উপর দোষ চাপিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে। কাজেই আজকের যুগে বনু কুরাইযা গোত্রর উপর হামলার আসল কাহিনী ও যৌক্তিকতা বিচার করলে বহু মুসলমান ইসলামকে আস্তে আস্তে মন থেকে ত্যাগ করে ফেলবে। এরকম নিরব নাস্তিক আমি নিজেই দেখেছি বহু। যারা নেটের মাধ্যমে ইসলামের আসল চেহারা জেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই মুহূর্তে তালেবান, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমদের রুখতে অবিশ্বাস ছাড়া ভিন্ন কোন পথও দেখি না। এই জন্যই অনেক বেশি বেশি “সহি ইসলাম” নিয়ে নেটে লেখালেখি করা উচিত…।
No comments