Header Ads

সর্বশেষ

দয়াল নবী ও একটি গণহত্যা

 

এক পাল্লায় মানুষের কাটা মাথা, আরেক পাল্লায় “একটি বিশেষ অনুভূতি”। মেপে দেখা গেলো, অনুভূতির পাল্লাটাই ভারী। এতোটাই ভারী যে অনুভূতির পাল্লা দড়ি ছিঁড়ে নিচে পরে যাওয়ার উপক্রম। হতেই হবে, সেটা যে সে অনুভূতি তো নয়। ধর্মীয় অনুভূতি। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি। যাতে কেউ আঘাত করলে হাজারটা মাথা কেটে ফেলে দেয়া যায়।

তবে ধর্মীয় অনুভূতির সংজ্ঞা এবং কি কি কারণে এই অনুভুতি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, তা এই পৃথিবীর কেউই সঠিকভাবে বলতে পারবে না। দয়ার সাগর, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবটিকে নিয়ে কেউ একজন হয়ত কার্টুন আঁকলো, অমনি অনুভূতিতে চোট লেগে গেলো। এই চোট আবার ঐ কার্টুনিস্ট এর রক্ত ছাড়া সেরে ওঠে না। দয়ালু সেই মহামানবটিকে গালি দেয়া কিংবা তার বিরুদ্ধে কিছু লেখাও একই ধরনের অপরাধ।

অনেকেই মনে করেন, অনুভূতির চোট রক্ত দিয়ে সারানো ঠিক না। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। এটা দয়াল নবীর আদর্শ না। তাদের ভুল প্রমাণ করতেই আজকের এই লেখা। ইতিহাস বলে, গালি দেয়ার অপরাধেও দয়াল নবী গালিদাতার কল্লা ফেলে দিয়েছিলেন। অতএব, আমরা বলতেই পারি, যিনি কার্টুনিস্টের কল্লা ফেলে দিলেন, তিনি মহামানবটির দেখানো সর্বোত্তম আদর্শই অনুসরণ করেছেন।

হয়তো কেউ নিরপরাধ পথচারীদের উপর ট্রাক উঠিয়ে দিলেন আল্লাহু আকবার বলে, তিনিও ভুল কিছু করেন নি। অনুসরণ করেছেন সেই মহামানবটিকেই।

মহামানবটির জীবন অনেক ঘটনাবহুল। কয়েক হাজার পোস্ট দিলেও সব লিখে শেষ করা যাবে না। আজকে আমরা ওসব ঘটনার মধ্য থেকে “ছোট্ট” একটি ঘটনা জানবো। যা আমাদের সাহায্য করবে ধর্মীয় অনুভূতি আরও গভীর হতে এবং উৎসাহিত করবে অপরের কল্লা ফেলে দিতে।

আজ আমরা দয়াল নবী কর্তৃক বনু কুরাইজা গোত্রের লোকেদের গণহত্যার কথা জানবো। আবার, বনু কুরাইজার গণহত্যা কেন, কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিলো, তা জানতে হলে আমাদের আরও জানতে হবে খন্দকের যুদ্ধ সম্পর্কে। তো চলুন বন্ধুরা, ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে আসি।

খন্দকের যুদ্ধ

“খন্দক” শব্দের অর্থ খাদ বা গর্ত। কিন্তু কেনো এমন নাম? যুদ্ধটা কি কোন গর্তের মধ্যে হয়েছিলো? না, তা নয়। বরং, গর্তের কারণেই যুদ্ধ হয়নি, তাই এমন নামকরণ। এটিকে আহযাব এর যুদ্ধ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

মুহাম্মদ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বনু কায়নুকা এবং ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে বনু নাদির নামক ইহুদি গোত্রদ্বয়কে মদিনা থেকে বিতাড়িত করেছিলো। এই ইহুদিরাই ছিলো ইয়াসরেব (মদিনা) অঞ্চলের আদিবাসী। কিন্তু মুহাম্মদ ইয়াসরেব এ গিয়ে নিজের দখলদারীত্ব প্রতিষ্ঠা করে, ইয়াসরেব এর নাম পরিবর্তন করে “মদিনা” ঘোষণা করে এবং বনু কায়নুকা ও নাদির এর মত গোত্রদের বিতাড়িত করে। তো, এর প্রতিশোধ নিতে বিতাড়িত কায়নুকা এবং নাদির গোত্রের নেতারা মক্কায় গিয়ে প্যাগানদের সাহায্য চায়। এরই ফলশ্রুতিতে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার সৈন্যবাহিনী মদিনা পুরুদ্ধার করার জন্য আক্রমণ করে।

আক্রমণকারী মক্কার সেনাবাহিনী ছিলো বিশাল! মদিনার ৩০০০ মুসলিম সৈন্যের বিপরীতে তাদের সৈন্য ছিলো ১০,০০০ সেই সাথে ৬০০ ঘোড়া এবং কিছু উট আরোহী সৈন্য। মক্কার এই বিশাল বাহিনী দেখে মুসলিম যোদ্ধারা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ে। তারা আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ এবং বাজে ধারনা করতে থাকে, মুহাম্মদকে ধোঁকাবাজ বলে আখ্যায়িত করে। তাদের অনেকেই প্রাণভয়ে পালাতে চাচ্ছিলো কিন্তু সে পথও পাচ্ছিলো না। মুসলিমদের অবস্থা হয়েছিলো এমনই করুণ।

Quran 33:10-16

তারা যখন তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপর থেকে আর তোমাদের নীচের দিক থেকে, তখন তোমাদের চক্ষু হয়েছিল বিস্ফোরিত আর প্রাণ হয়েছিল কণ্ঠাগত; আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম (খারাপ) ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলে। সে সময় মু’মিনগণকে পরীক্ষা করা হয়েছিল আর তাদেরকে ভীষণ কম্পনে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। আর স্মরণ কর, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা বলছিল- আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদেরকে যে ওয়া‘দা দিয়েছেন তা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্মরণ কর, যখন তাদের একদল বলেছিল- হে ইয়াসরিববাসী! তোমরা (শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে) দাঁড়াতে পারবে না, কাজেই তোমরা ফিরে যাও। আর তাদের একদল এই বলে নবী (সা)র কাছে অব্যাহতি চাচ্ছিল যে, আমাদের বাড়ীঘর অরক্ষিত অথচ ওগুলো অরক্ষিত ছিল না, আসলে পালিয়ে যাওয়াই তাদের ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। যদি শত্রুপক্ষ (মদীনা নগরীর) চারদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ করতো, অতঃপর তাদেরকে কুফুরীর আহবান করা হত, তবে তারা তাই করে বসত। তাতে তারা মোটেও বিলম্ব করত না। অথচ তারা ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়া‘দা সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে। বল, পলায়নে তোমাদের কোনই লাভ হবে না, যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর তাহলে তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।

সূরা আল আহযাব, আয়াত ১০ – ১৬

যাহোক, মক্কার এই বিশাল বাহিনী যখন মদিনায় এসে পৌছলো, তারা এক অভিনব সমস্যার সম্মুখীন হলো। তাদের সামনে বিশাল বিশাল সব গর্ত যা অতিক্রম করে তাদের বাহিনী সামনে এগোতে পারছিলো না। গর্তের এই সুরক্ষা স্তর মুহাম্মদ আগেই তৈরি করে রেখেছিলো সালমান ফারসীর পরামর্শে। এই টেকনিকটি ছিলো সম্পূর্ণ নতুন যা মক্কানরা কল্পনাই করতে পারে নি।

তো, মক্কার বাহিনী মদিনার চারপাশেই অবস্থান করলো কিন্তু মদিনায় প্রবেশের কোন পথ পেলো না। অবশেষে তারা আবিষ্কার করলো যে, মদীনার দক্ষিন পাশে যে দিকটায় বনু কুরাইজা গোত্র থাকে, সে পাশ দিয়ে মদিনায় প্রবেশের পথ খোলা আছে। আবার, বনু কুরাইজা ছিলো ইহুদি গোত্র, অতএব, তারা নিশ্চয়ই মক্কার বাহিনীকে ঢুকতে দিবে মুসলিমদের শেষ করে দেয়ার জন্য। এমনটাই ভাবছিলো আবু সুফিয়ান ও তার মক্কার সৈন্যরা।

এ ব্যাপারে আবু সুফিয়ান যখন বনু কুরাইজা গোত্রের অনুমতি চাইলো, তারা রাজি হলো না সৈন্যদের প্রবেশ করতে দিতে। কেন রাজি হয়নি? কারন মুহাম্মদ ও বনু কুরাইজার মধ্যে একটা চুক্তি ছিলো যে, মদিনায় বাইরের আক্রমণকারীদের কোনরকম সাহায্য করবে না বনু কোরাইজা। যদিও মতপার্থক্য আছে এমন চুক্তি সতিই হয়েছিলো কিনা যেহেতু এর স্বপক্ষে নির্দিষ্ট কোন দলিল পাওয়া যায় না। যাহোক, আবু সুফিয়ান হতাশ ও বিরক্ত হয়ে ফিরে এলো। অপেক্ষা করতে থাকলো মদিনার বাইরেই, হয়তো শীঘ্রই কুরাইজার লোকেরা তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিবে। কিন্তু সে অপেক্ষা আর শেষ হয় না। প্রায় ২৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর, আবু সুফিয়ান দেখলেন যে, তাদের সৈন্যরা মনোবল হারিয়ে ফেলছে, ঘোড়া আর উটগুলো খাবারের অভাবে মৃতপ্রায়, আবহাওয়া প্রতিকূল, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মদিনা আক্রমন না করেই তারা মক্কায় ফিরে যাবেন। এবং তাই করলেন। মক্কার সৈন্যরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলো যুদ্ধ ছাড়াই। প্রাণে বেঁচে গিয়ে একদম খুশিতে আত্মহারা মুসলিম সৈন্যরা।

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 460

এমনকি, মক্কার বাহিনী চলে যাওয়ার পর প্রাণে রক্ষা পেয়েও মুহাম্মদের চাপাবাজি বন্ধ হয়নি, কুরানের আয়াতের মাধ্যমে ঝাড়িঝুড়ি মারলেন যে আল্লাপাক গায়েবি সেনাবাহিনী আর স্পেশাল বাতাস পাঠিয়ে শত্রুদের ফিরিয়ে দিয়েছে। যদিও এই মুহাম্মদকেই ঘুষি মেরে দাঁত মোবারক ফেলে দিয়েছিলো উহুদের ময়দানে, তখন কেনো ফেরেশতা এসে সাহায্য করেনি সেটা গবেষণার বিষয়।

Quran 33: 9

হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যখন সৈন্যবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঝড়ো হাওয়া এবং এক (ফেরেশতারূপী) সৈন্যবাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।

সূরা আহযাব, আয়াত ৯

এটাই ছিলো মূলত খন্দকের যুদ্ধ। যদিও তখন প্রকৃতপক্ষে দূর থেকে দু চারটে তীর ছোড়াছুড়ি ব্যতিত আর তেমন কোন যুদ্ধ হয়নি।

বনু কুরাইজা গণহত্যা

যেদিন সকালে মক্কার সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ না করে ফিরে গেলো, ঠিক সেইদিন দুপুরেই মুহাম্মদ গণহত্যার উদ্দেশ্যে দূর্বল বনু কোরাইজা গোত্রে আক্রমণ করলো তার দলবল নিয়ে। কিন্তু কারণটা কি?

মক্কার সৈন্যবাহিনী চলে যাওয়ার পর সকল মুসলিম সৈন্যরা রিলাক্স মুডে থাকলেও, মুহাম্মদ কিন্তু শান্ত হতে পারেনি। নিজেদের হীনমন্যতা দূর করতে, জিহাদীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এবং উপরন্তু কিছু লুটের মাল পাওয়ার পরিকল্পনা করলো মুহাম্মদ। আর এজন্য খুব দূরেও যেতে হবে না, কাছেই অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ টার্গেট বনু কুরাইজা গোত্র রয়েছে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই কিভাবে আক্রমণ করবে? একটা উছিলা তো লাগেই। সবাইকে জানালো, জিব্রাইল এসেছিলো, তার কানে ফিসফিস করে বলে গেছে বনু কোরাইজা গোত্রে হানা দেয়া লাগবে। আল্লাহর তরফ থেকে স্পেশাল গায়েবী নির্দেশ। মানতেই হবে। যুহরের পরপর সবার প্রতি নির্দেশ ছিলো আসর এর নামাজ পড়তে হবে বনু কোরাইজাতে। দেরী করা যাবে না।

Bukhari Vol. 4, Book 52, Hadith 68 । বাংলা ভার্শন

২৮১৩. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন, তখন জিব্রীল (আঃ) তাঁর নিকট এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির মত ধুলি জমেছিল। তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বানূ কুরায়যার প্রতি ইশারা করে বললেন, এদিকে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের দিকে বেরিয়ে পড়লেন। (৪৬৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৫)

তো পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ হলো বনু কোরাইজা তে। বেশ কিছুদিন বনু কোরাইজা টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হলো। বনু কোরাইযার লোকেদের ভাগ্য এখন মুহাম্মদের হাতে।

এমন সময়, বনু আউস গোত্রের লোকজন মুহাম্মদের কাছে দাবী জানালো যে, কুরাইজার লোকেদের বিচারের দায়িত্ব তাদের গোত্রের কাউকে দেয়া হোক। কিন্তু বনু আউস গোত্রের লোকেদের এমন দাবীর কারণ কি ছিলো? জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। অতীতে, দুটি মুসলিম গোত্র ইয়েমেন থেকে মদিনাতে এসেছিলো। একটি হচ্ছে বনু আউস এবং অপরটি বনু খাযরাজ। এই দুই গোত্রের মধ্যে দন্দ্ব লেগেই থাকতো, একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতা করতো। এই দুই মুসলিম গোত্রের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ইহুদি গোত্রের মিত্রত্ব ছিলো। বনু খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিলো ইহুদি গোত্র বনু কায়নুকা। এবং, বনু আউস গোত্রের মিত্র ছিলো বনু কোরাইজা। তো, মুহাম্মদ যখন বনু কায়নুকা গোত্রকে আক্রমন করে তাদের পরাজিত করে এবং তাদের হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন তাদের মুসলিম মিত্র বনু খাযরাজ এগিয়ে এসেছিলো। খাযরাজ গোত্রপ্রধান আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুহাম্মদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে বিচারের দায়িত্ব নিয়েছিলো এবং তাদের মেরে ফেলার বদলে মদিনা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলো।

তাই, এবার যেহেতু বনু কোরাইযাকে পরাজিত করা হয়েছে যারা ছিলো বনু আউসের অতীত মিত্র, তাই এবার বনু আউস মুহাম্মদের কাছে দাবী তুললো তাদের গোত্রের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ দিতে। তো, মুসলিম গোত্রদুটিকে অভ্যন্তরীন কোন্দল থেকে বিরত রাখতে মুহাম্মদের এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না এবং মুহাম্মদ বনু আউস গোত্রের একাংশের প্রধান সাদ ইবনে মুয়ায কে মনোনীত করলো বনু কোরাইজার ভাগ্য নির্ধারন করার জন্য।

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 463

তো, উপস্থিত সকলের সামনে সাদ তার বিচারের রায় দিয়ে বললো, বনু কোরাইযার সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা করা হবে, তাদের ধন সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা হবে এবং সকল নারী ও শিশুদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক করা হবে। আর এ ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্রই মুহাম্মদ ঘোষণা দিলো, সাদের বিচার একদম সঠিক। আল্লাহপাক নিজে যেরকম বিচার করতেন, সাদ ঠিক তেমন বিচারই করেছে।

Bukhari Vol. 5, Book 58, Hadith 148 । বাংলা ভার্শন

৩৮০৪. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, কতিপয় লোক (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)-কে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) নেমে আসে। তাঁকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হল। তিনি গাধায় সাওয়ার হয়ে আসলেন। যখন মাস্জিদের নিকটে আসলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি অথবা (বললেন) তোমাদের সরদার আসছেন তাঁর দিকে দাঁড়াও। তারপর তিনি বললেন, হে সা‘দ! তারা তোমাকে সালিশ মেনে বেরিয়ে এসেছে। সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমি তাদের সম্পর্কে এ ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হোক এবং শিশু ও মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা হোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার ফায়সালা মোতাবেক ফায়সালা দিয়েছ অথবা (বলেছিলেন) তুমি বাদশাহর অর্থাৎ আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা করেছ। (৩০৪৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫২৯)

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 464

তো, এবার মুহাম্মদের নির্দেশে বনু কোরাইযার সকল সাবালক পুরুষদের হত্যা করার মিশন শুরু হলো। তাদের উলঙ্গ করে পরীক্ষা করা হতো কার কার গুপ্তাঙ্গে চুল উঠেছে। যাদের চুল ছিলো না, তাদের যুদ্ধবন্দীদের দলে পাঠিয়ে দেয়া হতো। আর যাদের চুল উঠেছে তাদের মধ্য থেকে ছোট ছোট দল আকারে এক এক দল করে বের করে আনা হতো এবং তাদের মাথা কেটে খনন করা গর্তগুলোতে ফেলে দেয়া হতো। এভাবেই হত্যার কাজ চললো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। সেদিন গণহত্যায় নিহত মোট পুরুষের সংখ্যা ছিলো ৭০০ বা ৮০০ এবং মতান্তরে ৮০০ বা ৯০০ পর্যন্ত। 

Abu Dawud, Book 39, Hadith 4390  বাংলা ভার্শন

৪৪০৪। আতিয়্যাহ আল-কুরাযী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বনী কুরাইযার বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তারা দেখতো, যার নাভীর নীচে চুল উঠেছে তাকে হত্যা করা হতো; আর যার উঠেনি, তাকে হত্যা করা হতো না। আর আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, যাদের তা উঠেনি।

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 464

ওদিকে, বনু কুরাইজার সকল সম্পদ, নারী ও শিশুদের থেকে এক পঞ্চমাংশ মুহাম্মদ রাখার পর বাকিটা ভাগ করে দেয়া হলো সকল মুসলিম যোদ্ধাদের মাঝে। আল্লাহর রাসূল সাদ বিন জায়িদ আল আনসারী কে নাজদা নামক দাস মার্কেটে পাঠিয়েছিলেন সাথে কিছু কুরাইযা যুন্দবন্দী নারীদের দিয়ে, তাদের বিক্রি করে ঘোড়া এবং অস্ত্রসস্ত্র কিনে আনার জন্য।

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 466

কুরাইযার সকল পুরুষদের কল্লা কাটা হচ্ছে দলে দলে, নারী ও শিশুদের বন্দী ও কতককে বিক্রি করতে পাঠানো হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অসহায় কুরাইযার কারও মানসিক অবস্থা ঠিক থাকার কথা নয়। সেদিন তেমনি এক কুরাইযা নারীকে দেখেছিলেন হযরত আয়েশা। ঐ মহিলাটি তার কাছাকাছিই ছিলো। যাকে হত্যা করা হয়েছিলো মুহাম্মদকে গালি দেয়ার অপরাধে। যখন হত্যার উদ্দেশ্যে মহিলাটিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখনও মহিলাটা উচ্চস্বরে হাসছিলেন। আয়েশা এই দৃশ্য দেখে সেটি ভুলতে পারছিলেন না। এমন করুণ দৃশ্য দেখলে একজন প্রকৃত মানুষ সে দৃশ্য সহজে ভুলতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক।

Abu Dawud, Book 14, Hadith 2665 । বাংলা ভার্শন

২৬৭১। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী কুরাইযার কোনো মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তবে এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডেকে বললো, অমুক মহিলাটি কোথায়? সে বললো, আমি। আমি (‘আয়িশাহ) বললাম, তোমরা কি হলো, (ডাকছো কেন)? সে বললো, আমি যা ঘটিয়েছি সেজন্য (সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছিলো)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হরো। আমি ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। আমি তার আচরণে অবাক হয়েছিলাম যে, তাকে হত্যা করা হবে একথা জেনেও সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো।

বনু কোরায়জার যুদ্ধবন্দী নারীদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ বেছে নেন ১৫ বছর বয়সী সুন্দরী কিশোরী রায়হানা বিনতে জায়িদ / রেহানা বিনতে যায়িদ কে। মুহাম্মদ রায়হানা কে প্রস্তাব করেছিলেন বিয়ে করতে। কিন্তু রায়হানা তাতে রাজি না হয়ে বরং তাকে দাসী হিসেবেই রেখে দিতে বলেছিলেন। রায়হানার কাছে মুহাম্মদের বউ হওয়ার চেয়ে দাসী হওয়া অপেক্ষাকৃত কম অসম্মানের বলে মনে হয়েছে। যাহোক, যুদ্ধবন্দিনী নারী যেহেতু হালাল, তাই মুহাম্মদ বাড়াবাড়ি না করে রায়হানাকে দাসী হিসেবে রেখে দিতেই রাজি হলো। মেয়েটাকে ভোগ করাই আসল কথা, বিয়ের মন্ত্র পড়া হোক বা না হোক, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। অবশেষে, রায়হানা নামক মেয়েটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষের সান্নিধ্যে এসে ধন্য হলেন (পড়ুন ধর্ষিতা হলেন)।

Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah (translated by A. Guillaume), P. 466

মডারেট মুসলিমদের কুযুক্তিঃ

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু মুসলিম এমন একটি গণহত্যার ঘটনাকে বৈধতা দিতে কিছু ফালতু কুযুক্তি দাঁড় করায়। চলুন, সেগুলোও জেনে নিই।

➡ সবচেয়ে বেশি যেটি শোনা যায়, সেটি হচ্ছে, বনু কুরাইজা খন্দকের যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। তারা মুসলমানদের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলো।

অনেকে কোরানের একটি আয়াত এনে হাজির করবেন বনু কোরায়জার বিশ্বাসঘাতকতা প্রমাণের জন্য, সেটি হচ্ছে,

কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ হতে অবতরণে বাধ্য করলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন; ফলে তোমরা তাদের কতককে হত্যা করেছ এবং কতককে করছ বন্দী।


এটি সূরা আহযাবের ২৬ নাম্বার আয়াত, বলা হচ্ছে বনু কুরাইজা কুরাইশদের সাহায্য করেছিলো। এই আয়াতটি খন্দকের যুদ্ধের সময় তো নয়ই, বরং বনু কুরাইজার গণহত্যারও পরে এসেছে যা পড়েই বুঝা যাচ্ছে। এটা গণহত্যার বৈধতা দেয়ার জন্য মুহাম্মদের আয়াত ডাউনলোড ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন পুরো একটা গোত্রকে মেরে সাফ করে দেয়া হলো, তখন মুহাম্মদ অনুভব করছিলেন কুরাইজার দোষ বের করে একটা আয়াত এনে গণহত্যার বৈধতা দিতে, তাই এই আয়াত।

একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, বিশ্বাসঘাতকতার এই দাবীটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যদি বনু কুরাইযা সত্যিই কুরাইশদের পক্ষ নিতো, তাহলে আজকের পৃথিবীতে মুসলিম নামে কোন প্রাণীই অবশিষ্ট থাকতো না। উপরে, সুরা আহযাবের ১০ থেকে ১৬ পর্যন্ত আয়াতগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, সেখানে আমরা দেখেছি মুসলিমরা কত দূর্বল ছিলো এবং তাদের কি অবস্থা হয়েছিলো মক্কার সেনাবাহিনী দেখে। আল্লাহ সম্পর্কে বাজে ধারনা ও সন্দেহ, মুহাম্মদকে গালাগাল দেয়া হয়েছিলো। অনেকেই প্রাণ রক্ষার্থে পালাতে চাচ্ছিলো কিন্তু পথ পাচ্ছিলো না। এটা অত্যন্ত যৌক্তিক যে, সেদিন বনু কুরাইজা মক্কার সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে তাদের ঢুকতে দিলে সকল মুসলিমদের হত্যা করে ফেলা হতো। তাছাড়া, আহযাবের ১৪ নম্বর আয়াতটি পড়লেই বুঝা যায় সেদিন কোন যুদ্ধ হয়নি।

যদি শত্রুপক্ষ (মদীনা নগরীর) চারদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ করতো, অতঃপর তাদেরকে কুফুরীর আহবান করা হত, তবে তারা তাই করে বসত। তাতে তারা মোটেও বিলম্ব করত না।

সুরা আহযাব, আয়াত ১৪

বনু কুরাইজা বিশ্বাসঘাতকতা করে কুরাইশদের পক্ষ নিলে যুদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু কুরাইযা তা করেনি বলেই যুদ্ধ হয়নি।

উপরে সিরাত থেকে একটি রেফারেন্সও দিয়েছি, যেখানে আবু সুফিয়ান বলছে,
Then Abu Sufyan said: “O Quraish, we are not in a permanent camp; the horses and camels are dying; the Banu Qurayza have broken their word to us and we have heard disquieting reports of them. You can see the violence of the wind which leaves us neither cooking-pots, or fire, nor tents to count on. Be off, for I am going
অর্থাৎ, আবু সুফিয়ানের ভাষ্যমতে বনু কুরাইযা সেদিন কথা রাখেনি, কুরাইশদের সাহায্য করেনি।

বনু কুরাইজা কেনো সেদিন কুরাইশদের সাহায্য করেনি? তারা কি মুহাম্মদকে ভালোবাসতো? আনুগত্যের কারণেই তাদের এ সিদ্ধান্ত? জানতে হলে আমাদের আরেকটু ভেতরে ঢুকতে হবে। সিরাতে একটু নজর দিই,

On the night of the sabbath of Shawwal A.H.5 it came about by God’s action on behalf of His apostle that Abu Sufyan and the chiefs of Ghatafan send Ikrima b. Abu Jahl to B.Qurayza with some of their number saying that they had no permanent camp, that the horses and camels were dying; therefore they must make ready for the battle and make an end of Muhammad once and for all. They replied that it was the sabbath, a day on which they did nothing, and it was well known what had happened to those of their people who had violated the sabbath. ‘Moreover we will not fight Muhammad along with you until you give us hostages whom we can hold as security until we make an end of Muhammad; for we fear that if the battle goes against you and you suffer heavily you will withdraw at once to your country and leave us while the man is in our country, and we cannot face him alone.’ When the messengers returned with their reply Quraysh and Ghatafan said that what Nu’aym told you is the truth; so send to B. Qurayza that we will not give them a single man, and if they want to fight let them come out and fight. Having received this message B. Qurayza said: ‘What Nu’aym told you is the truth. The people are bent on fighting and if they get an opportunity they will take advantage of it; but if they do not they will withdraw to their own country and leave us to face this man here. So send word to them that we will not fight Muhammad with them until they give us hostages.’ Quraysh and Ghatafan refused to do so, and God sowed distrust between them, and sent a bitter cold wind against them in the winter nights which upset their cooking-pots and overthrew their tents.

IBN ISHAQ, SIRAT RASUL ALLAH (TRANSLATED BY A. GUILLAUME), P. 459

ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, কুরাইজা ও কুরাইশদের মধ্যে বার্তা চালাচালি হচ্ছিলো বার্তাবাহকের মাধ্যমে। বনু কুরাইজা প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মদকে অপছন্দ করতো এবং তার পতন চাইতো। তবে তারা মুহাম্মদের দলবলকে ভয় পেতো। কুরাইজার লোকজন কুরাইশদের উপর ভরসা করতে পারছিলো না এই জন্যে যে, যদি কুরাইশরা মাঝপথে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে মক্কায় ফিরে যায়, তাহলে কুরাইযার সবাইকে হত্যা করবে মুহাম্মদ। তাই, কুরাইজা চেয়েছিলো, কুরাইশরা তাদের কিছু লোক বনু কুরাইজার জিম্মায় রাখুক। তাহলে তারা কুরাইশদের সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু উত্তরে কুরাইশরা জানায়, তারা কোন লোক জিম্মায় রাখতে রাজি না। একথা শুনে বনু কুরাইজা অসম্মতি জানায় কুরাইশদের দলে যোগ দিতে। এর পর পরই আবু সুফিয়ান তার দলবল নিয়ে মক্কায় ফিরে যায়। সুতরাং, কুরাইজার মনের ভেতর যাই থাকুক, যুদ্ধের ময়দানে তারা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যায়নি কিংবা যেতে সাহস পায়নি।

তাছাড়া, উপরে আমরা বুখারির হাদিসের রেফারেন্সেও দেখেছি, উল্লেখ আছে সকল সিরাত গ্রন্থগুলোতেও, খন্দকের যুদ্ধে মক্কার সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পরও কারও মাথাব্যথা ছিলো না বনু কুরাইজা কে নিয়ে। ষড়যন্ত্র তো দূরের কথা। কিন্তু, মুহাম্মদ যখন সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মত আকাশ থেকে জিব্রাইল ফেরেশতার গায়েবী কন্ঠ শুনতে পেলেন যে, আজাইরা বসে না থেকে বনু কুরাইজাতে আক্রমণ করা লাগবে, ঠিক এই গায়েবি নির্দেশের পরই মুহাম্মদ দলবল নিয়ে আক্রমণটা করেছিলো। বাস্তবে যদি বনু কুরাইজা বিশ্বাসঘাতকতা করতোই, তাহলে গায়েবী নির্দেশ দরকার পরতো না, তার আগেই জিহাদীরা কুরাইজাতে হামলা করে বসতো।

➡ গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে অনেকে আরও একটি খোঁড়া যুক্তি দিতে চান, সেটি হচ্ছে, গণহত্যার রায় দিয়েছিলেন সাদ বিন মুয়াজ, যার রায় কুরাইজার লোকেরা মেনে নিতে সম্মত হয়েছিলো। মুহাম্মদ শুধু পরে এই রায় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র।

এই সম্পর্কে যতগুলো হাদিস এসেছে, যেসব জায়গায় সম্মত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, মূল আরবী হাদিসগুলোতে কোথাও এটা স্পষ্ট করে বলা নেই যে কারা সম্মত হয়েছিলো (যদিও অনেকে ব্রাকেটের ভেতর বনু কুরাইজার কথা লিখে দেন) , সেটা বনু কুরাইজা নাকি তাদের অতীত মুসলিম মিত্র বনু আউস গোত্র যাদের দাবীতে মুহাম্মদ তাদের আউস নেতা সাদকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলো। সাদ বিন মুয়াযকে কেন, কখন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো, সে ঘটনা উপরে উল্লেখ করেছিলাম, এটাই অধিক যুক্তিযুক্ত যে, সম্মত হওয়া লোকেরা ছিলো আউস গোত্রের লোকজন। তাছাড়া, বনু কুরাইজাকে তাদের বিচারক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া বাস্তবস্মত এবং যৌক্তিক নয়, কেননা অপরাধী (মুহাম্মদের দৃষ্টিকোণ থেকে) নিজের বিচারক নিজে পছন্দ করে না। তাছাড়া, তখন ইতোমধ্যেই যেহেতু বনু কোরাইজা পরাজিত হয়ে নতি স্বীকার করেছে, তাই মোহাম্মদের কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না বনু কোরাইজার মতামত নিয়ে বিচারক নিয়োগ দেয়া।

আচ্ছা, তর্কের খাতিরে আমরা না হয় ধরেই নিলাম সাদ বিন মুয়াজ এর রায় মেনে নিতে সম্মত ছিলো বনু কুরাইজার লোকজন, কিন্তু উপরে উল্লেখিত বুখারীর হাদিস অনুযায়ী, সাদ যখন ঘোষণা করলেন যে সকল পুরুষদের গলা কেটে হত্যা করা হবে, নারী ও শিশুদের বন্দি করা হবে, ঠিক তখনই মুহাম্মদ বলে উঠেছিলো যে, সাদ সেই রায় দিয়েছে যা আল্লাহর রায় ছিলো। অর্থাৎ, মুহাম্মদ সাথে সাথে এই রায়কে সাপোর্ট দিলো। সাদ গণহত্যার রায় দিলেও একজন প্রকৃত ভালো মানুষ কখনও এই রায়কে সাপোর্টও করতে পারতো না, বাস্তবায়ন তো দূরের কথা।

➡ আরও একটি দাবী শোনা যায় যে, সাদ তাওরাতের আইন অনুযায়ী এই রায় দিয়েছিলো। এটাও হতে পারে না। কেননা,
জিব্রাইল কি তখন ছুটিতে ছিলো? মুহাম্মদের বউদের হুমকি দিতেও আল্লাপাক কোরানে আয়াত পাঠাইতেন, আর এতোবড় একটি ঘটনায় একটা আয়াতও পাঠাইতে পারলেন না? নির্ভর করতে হলো তাওরাতে? নাকি কোরানের আয়াতে গণহত্যার কথা বলে মুহাম্মদ নিজ কাঁধে দায় নিতে চাচ্ছিলেন না? কোরান থাকতে তাওরাত কেন?

No comments