Header Ads

সর্বশেষ

কারো ধর্মানুভূতিতে কি আঘাত দেওয়া উচিত?

 


এটা খুবই কমন এবং বহুল জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন।

বর্তমান বিশ্বে ধর্মানুভূতির যে ডেফিনিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেঃ তাতে একজন মুসলমান গোরু খেলে, হিন্দুদের ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং সেই ব্যক্তি কে স্রেফ পিটিয়ে ফেলা হয়।
সাফা কবির যদি অন্যদের বিশ্বাস নিয়ে একটুও মন্তব্য না করে বলেন যে তিনি না দেখা পরকাল বিশ্বাস করেন না; তাহলেও আপামর মুসলমানদের ধর্মানুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়। তারপর ক্রমাগত খুনের হুমকি পেয়ে বাধ্য হয়ে সাফা কবির কে ক্ষমা চাইতে হয়।
তাহলে চলুন দেখি, সত্যিই কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া উচিত কি-না।

১) কেউ যদি ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দিতেন তবে পৃথিবী আজও সমতল থাকতো। আর ফ্ল্যাট আর্থারদেরও এত নাস্তানাবুদ হতে হত না।


২) কেউ যদি বিশাল সংখ্যক মানুষের অনুভূতির প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখাতে না পারতো তাহলে আজও পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু হত। আজও সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াত, সাথে থাকতো মঙ্গল,বুধ, শুক্র।

৩) এই ধর্মানুভূতিকে মদত দিয়ে গেলে পৃথিবী আজও এক কচ্ছপের পিঠে করে ঘুরে বেড়াত।

সমতল পৃথিবী।-১
৪) রাজা রামমোহন রায় যদি হিন্দুদের 'ধর্মানুভূতি'-তে আঘাত না করতেন তাহলে আজও লাখ লাখ নারীকে স্বামীর চিতায় জীবন্ত আত্মাহুতি দিয়ে স্বর্গবাসী হতে হত।

৫) খ্রিস্টানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করলে আজও হাজার হাজার অল্পবয়সী নিষ্পাপ মেয়েগুলো কে ডাইনীর হিসেবে আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হতো।

৬) ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করা হলে বর্ণাশ্রম আজও বল্লাল সেনের যুগের মত প্রকট হতো। সাধারণ শ্রেণির মানুষের রক্ত চোষে খেতো ব্রাহ্মণরা। তবে এইক্ষেত্রে ধর্মানুভূতিতে ভালো আঘাত করা হয়নি। সেজন্যই ২০২০ সালে এসেও ভারতে বর্ণাশ্রম মারাত্মক আকার ধারণ করে আছে।


৭) ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দিলে এনারা 'প্রথম চাঁদে গমনকারী'-মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন না।

৮) ধর্মানুভূতিতে ভালো মত আঘাত করা হচ্ছে না বলেই আজ গোরুর দাম মানুষের চাইতে বেশি।


৯) অনুভূতিকে তাল দিয়ে চললে আজ উটমূত্র-গো মূত্র-পড়া পানি-গঙ্গাজল পানই হতো মূল চিকিৎসা পদ্ধতি। হাসপাতালে যাওয়ার বদলে চলতো ঝাড়ফুঁক।

১০) ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দিলে আজও তিন তালাক ও হিল্লা বিয়ের মত বর্বর প্রথা এখনও চালু থাকতো।

ঢাকা মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রীরা। -১১
১১) সবগুলো ধর্মের অনুভূতিকে আঘাত না করলে আজ দেশের অর্ধেক মানুষের পড়াশোনার অধিকার থাকতো না। তাঁরা পিতা ও স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে সারা জীবন অন্যের দাসী হয়ে থাকতেন। তখন তাঁদের একমাত্র কাজ হতো রান্না করা আর বাচ্চা উৎপন্ন করা।

১২) বিধর্মী ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করে মুসলিম ভাইদের সাথে যুদ্ধ করে ধর্মানুভূতিতে আঘাত না* করলে আজ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হত না।

১৩)" নারী নেতৃত্ব হারাম"-এটা না মেনে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে এইদেশে কখনও মুজিব হত্যার বিচার হত না। লাখ লাখ শহীদের হত্যাকারী রাজাকারদের বিচার হত না।

চিত্রঃ তিমির বিবর্তন।
১৪) বিবর্তনবাদ স্বীকার করে সকল ধর্মের অনুভূতি কে আঘাত না করলে, আজ এত এত রোগের ভ্যাকসিন তৈরি হত না। ফলে কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন।

চিত্রঃ রামচন্দ্র কতৃক জ্ঞানচর্চার অপরাধে শূদ্র শ্রেণির মানুষ শম্বুক হত্যা।
১৫) ধর্মানুভূতিতে আঘাত না দিলে সহস্র বছর ধরে চলা রীতি, 'নিম্নবর্ণের মানুষদের জ্ঞানচর্চার অধিকার না থাকা'-এখনও বলবৎ থাকতো। আর তাদের কেউ যদি গোপনে জ্ঞান চর্চা করতে চাইতো,তখন সয়ং ভগবান রাম এসে তাকে হত্যা করে বর্ণাশ্রম রক্ষা করতেন।


আরো অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতো। তবে আপনাকে আর বিরক্ত করতে চাচ্ছি না। প্রশ্ন ছিল 'কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া উচিত কি-না'।
আশা করি আপনাকে কিছুটা ধারণা দেওয়া গিয়েছে ধর্মানুভূতি আঘাত না দিলে বিশ্বের আজ কী হাল হত।

No comments