নাজিমুদ্দিন সামাদ এর হত্যাকারীদের একজন গ্রেফতার
ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদের একজন হত্যাকারী আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হানকে গতকাল কাউন্টার টেরোরিজম এবং মেট্রোপলিটন গোয়েন্দাপুলিশের কর্মকর্তারা গ্রেফতার করেছে। একদিকে এটি অত্যন্ত স্বস্তির একটি সংবাদ এবং অন্যদিকে আশাবাদী হবার মতও বটে। যদিও গণজাগরন মঞ্চের সক্রিয় সদস্য নাজিমকে হত্যার প্রায় ৬ মাস পর এই সন্দেহভাজন খুনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তথাপিও এটি একটি সাফল্য আমাদের আইন শৃংখলাবাহিনীর, এতে সন্দেহ নেই।
রবিবার রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মো. রশিদুন নবী ভূইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের ত্রফ থেকে জানা যায় যে, রশিদুন নবী ভূইয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার বেতারগাঁও গ্রামে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী ছিল। তবে লেখাপড়া শেষ না করেই ২০১৫ সালের প্রথম দিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। এরপর সে ঢাকায় চলে আসে। সংগঠনের নির্দেশে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে হত্যার টার্গেট করে। এদের মধ্যে গত বছরের ৩১ অক্টোবর শনিবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ায় সি-ব্লকের ৮১৩ নম্বর বাসায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় সে অংশ নেয়। হামলায় শুদ্ধস্বরের স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিম গুরুতর আহত হন। আহমেদুর রশিদ টুটুল মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, এটাই ছিল তার প্রথম হামলা।
আহমেদুর রশীদ টুটুলের ওপর হামলার পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যা করে রশিদুন নবী ভূইয়ার নেতৃত্বে আনসার আল ইসলামের এই স্লিপার সেল। এর পরপরই গত ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে নিজ বাসায় ইউএস এইডের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রশিদুন নবী জড়িত ছিল বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর রশিদুন নবী লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে।হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর আবার ঢাকা থেকে চলে যায়। কিছুদিন সে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকায় ঘুরে ঘুরে থাকতো। এ সময়ে সে একটি স্কুলে শিক্ষকতাও করেছে।’
এই গ্রেফতারের ফলে অন্তত এইটুকু আশা করাই যায় যে ব্লগার নাজিম উদ্দিনের বাকী খুনীরাও একে একে ধরা পড়বে এবং সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তবের আতংকের কথা হচ্ছে বাংলাদেশে স্লিপার সেল এত অধিক সংখ্যক ভাবে তৈরী হয়েছে যে এগুলো সবগুলোকে খুঁজে বের করা এবং একটির সাথে আরেকটির কানেকশন খুঁজে বের করা অত্যন্ত কষ্টের।
সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে একটি স্লিপার সেলের ভেতরের ব্যাক্তিরাই আসলে জানে না যে কার কি পরিচয় বা কে কোথায় থেকে এসেছে। প্রত্যেকেরই এমনভাবে মগজ ধোলাই করা হয় যে একজন আরেকজনের পরিচয় যে জানবে সে বোধশক্তিও এদের থাকেনা।
রশিদুন নবীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আশা করি একে একে আর বাকী খুনীরা ধরা পড়বে। আশায় বুক বাঁধি
No comments