Header Ads

সর্বশেষ

ইসলামে নারীর মর্যাদা!


ইসলাম নারীকে কি কি সুমহান অধিকার দিয়েছে, তার বয়ান মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ওয়াজকারীদের মুখে শুনে থাকি। সেখানে বলা হয়, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর বিন্দুমাত্র কোন অধিকার ছিল না, নারী শিশুকে জন্মানো মাত্রই জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হতো, বিক্রি করে দেয়া হতো, তাদের সম্পত্তির কোন অধিকার ছিল না, তাদের মানুষ হিসেবেই গন্য করা হতো না ইত্যাদি। এই সব কথা শুনে বড় ভাল লাগে, মনে শান্তি পাই যে ইসলাম নারীকে খুব উঁচু সম্মান দিয়েছে।

কিন্তু একই সাথে আশ্চর্য লাগে, পৃথিবীর ইসলাম প্রধান দেশগুলোতে নারীর এই দুরবস্থা কেন? এর কারণ কি? যেই ধর্মটি নারীকে এত এত সম্মান আর সুমহান মর্যাদা দিয়ে দিলো, সেই ধর্মের মানুষেরাই কেন সব চাইতে বেশি নারী অবমাননার সাথে যুক্ত। ইসলামপন্থী মোল্লারাই কেন নারীর সম্পত্তিতে সমান অধিকারের বিরুদ্ধে সব চাইতে সোচ্চার? মোল্লারাই কেন সবচাইতে বেশি নিজের স্ত্রীকে নির্যাতন করে! এই কদিন আগেও ইসলামী দেশগুলোতে নারীর ভোটাধিকার ছিল না, নারীকে বাইরে বের হতে হলেও তার স্বামীর বা পিতার অনুমতি লাগতো। এর নামই কি ইসলামী মর্যাদা?

এমন হতে পারে যে এখনকার মুসলিমরা আর প্রকৃত ইসলাম পালন করছে না। ছহি ইসলামে নারীকে যেই সম্মান দেয়া হয়েছে, মনে হচ্ছে মুসলিমরা তার থেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন জাগে, গোটা বিশ্বে কেউ কি ইসলাম অনুসরণ করছে না? ইসলামী দেশগুলোতে নারীর চরম অমানবিক অবস্থা কিভাবে সম্ভব? আর ছহি ইসলাম যদি কেউ পালন না’ই করে থাকে, ব্যবহারিকভাবে অনুপযুক্ত সেই নিয়ম নীতির প্রয়োজনটাই বা কি? যেই আদর্শ প্রয়োগ হবার নয়, তা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখারই বা দরকার কি?

কিন্তু তারপরেই আমরা প্রকৃত ইসলাম তথা একদম কোরান হাদিস থেকে নারীর মর্যাদা এবং সুমহান অধিকার বিষয়ে যদি একটু দৃষ্টি দেই, তাহলেই পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার স্যাপার দেখতে পাই। ইসলামপন্থীদের গলা ফাটানো নারীর সুমহান অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারগুলো সম্পর্কে কোরান হাদিস আসলে কি বলে? আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর যেই অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়, সেটাই বা কতটা সত্য? আমরা জানি, প্রতিটি বিজয়ী বাহিনীই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঢোল বাজাবার জন্য আগের আমল সম্পর্কে নানা ধরণের মিথ্যাচার করে। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বলে বিএনপির আমলে জনগনের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, সব লুটপাট করা হয়েছে। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও আগের আওয়ামী শাসন সম্পর্কে একই কথা বলে। এগুলো বলে নিজেদের শাসনকে আগের চাইতে ভাল প্রমাণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, বিএনপি আওয়ামী দুই আমলেই জনগনের অবস্থা খারাপই থাকে। কেউই জনগনকে সেই সুমহান মর্যাদা দেয় না। ইসলামের ক্ষেত্রেও কি একই ঘটনা ঘটেছে? ইসলাম আইয়্যামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে যা বলে, তার কি আদৌ কোন ভিত্তি আছে?

প্রশ্ন হচ্ছে, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারী শিশুদের এভাবে জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হলে ইসলামের নবী এবং তার সাহাবাগন ১০-১৫ টা করে বিবাহ এবং দাসী রাখার মত পর্যাপ্ত নারী কোথায় পেতেন? সম্পত্তিতে বিন্দুমাত্র অধিকার না থাকলে মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা, যিনি ছিলেন বিধবা, সম্ভ্রান্ত একজন মহিলা ব্যবসায়ী, তিনি এত বিপুল সম্পদের মালিক কিভাবে হয়েছিলেন? বিধবা হবার পরেই তাকে কেন লোকজন বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিলো না? তিনি সম্পত্তির অধিকার কিভাবে পেয়েছিলেন? ভীষণ গোলমেলে ব্যাপার স্যাপার বটে! খাদিজা যে একজন বিধবা এবং সম্ভ্রান্ত সম্মানিত ব্যবসায়ী ছিলেন, তা ইসলামী সুত্র থেকেই জানা যায়। এখন দুটো ব্যাপার হতে পারে, হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত আমলে নারীর যেই অবস্থানের কথা বলা হয় তা মিথ্যা, অথবা খাদিজা সম্পর্কে যা বলা হয় তা মিথ্যা। দুটো একই সাথে সত্য হতে পারে না। কারণ এইদুটো পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য। খাদিজার মত আরো অসংখ্য উদাহরণ দেখানো যেতে পারে, অথচ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, বা সম্পত্তিতে অধিকার বঞ্চিত করার বিশেষ কোন উদাহরণই পাওয়া যায় না। বরঞ্চ উল্টো উদাহরণ পাওয়া যায়। তাহলে আসলেই কী আইয়্যামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে ইসলামের দাবীগুলো সত্য, নাকি সেগুলো সবই অতিরঞ্চিত কিছু কথা যা বলে ইসলামকে মহান প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। কারণ আগের আমল সম্পর্কে অতিরঞ্চিত সমালোচনা সবসময়ই পরের আমলকে এক ধরণের বৈধতা দেয়। দুইটি খারাপ বিষয়ের তুলনা করা হলে মানুষ কম খারাপটিকেই ভাল হিসেবে গ্রহণ করে। মানুষের স্বভাব এরকমই।

No comments