Header Ads

সর্বশেষ

আমার জীবন পরিবর্তন হওয়ার গল্প!

 


সবাইকে আমার ব্লগে স্বাগতম, আজ থেকে আমি আমার এই ব্লগটি শুরু করলাম এবং এখন থেকে এখানে লেখালেখি করবো। আশা করি লেখাগুলো পড়বেন এবং কেমন হয় মন্তুব্য করে জানাবেন। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো আমি কিন্তু লেখালেখিতে এতো বেশি একটা ভালো না, তবে চেষ্টা করবো। আর আমার এই লেখালেখির পেছনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ। আর কিভাবে, সেই বিষয়টি একটু পরেই বুঝতে পারবেন।


আর হ্যাঁ, আর একটি কথা বললে আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, তারপরও বলছি। আজ থেকে ঠিক একমাস একদিন আগেও আমি ভাবিনি যে ব্লগে লিখবো, বিশেষ করে আজকে যেই বিষয়টি নিয়ে লিখছি এগুলো নিয়ে লিখবো। আসলে এটা আমি কল্পনাও করিনি।


আপনাদের বলে রাখা ভালো যে আমি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। আমাদের বাসায় নিয়মিত ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়। বাসার সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আমিও পাচঁ ওয়াক্ত না পারলেও পতিদিনই দুই কিংবা তিন ওয়াক্ত পড়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু একটি কথা শুনে আপনাদের কেমন লাগবে জানিনা, তবে আমাকে বলতেই হবে। আর সেটি হলো আমি এখন থেকে আর নামাজ পড়ি না। কেন পড়িনা সেটি নিয়ে বিস্তারিত পরে কখনো বলা যাবে। তবে এটুকুই বলতে চাই ‘‘কোনও ধর্ম যদি মানুষকে হত্যা করার বিধান-ই দিয়ে থাকে, তাহলে সেই ধর্ম আমার দরকার নেই’’।


আর এই সব নানাবিধ পশ্নের উত্তর জানতেই গত একমাস ধরে আমি অনেক কিছু জানার চেষ্টা করলাম। অনেক বড় বড় ইসলামিক ঘরোনার লেখকের বই পড়লাম। এর মধ্যে প্রথমেই যেই বইটি পড়ি সেটি হলো নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের অন্যতম একজন লেখক মুহাম্মাদ জসীমুদ্দীন রাহমানীর ‘‘উন্মুক্ত তরবারি’’ বইটি। মজার ব্যপার হচ্ছে এই বইটি দিয়ে নাকি তারা মানুষকে ইসলামের পথে দাওয়া দিচ্ছে। কিন্তু এই বইটি পরেই মনে নাস্তিক হওয়ার ভাবনা আসে। আর আমি এও মনে করি যে, একজন সাধারণ মস্তিষ্কের মানুষ যদি ধর্মান্ধকে প্রশ্রয় না দিয়ে অর্থাৎ শুধুমাত্র তাঁর বিবেককে কাজে লাগিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে এই বইটি পড়ে, তাহলে সেও আমার মতোই নাস্তিক হওয়ার কথা ভাববে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।


কিন্তু আমি জানি, বাংলাদেশে নাস্তিক একটা গালি৷ সমাজের শিক্ষিত, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের ধারণা নাস্তিকতা মানেই হচ্ছে খারাপ কিছু৷ তারা ধর্ম পালন করে না, ফলে অনৈতিক কাজে তাদের কোনো বাধা নেই৷ একজন নাস্তিক ব্যক্তি সব নষ্টের মূল, এমন ধারণা বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত৷ তবে এই বইটি পড়ে আমি এর উল্টোটা হয়েছি, মুসলিম মানেই জঙ্গিবাদ, মুসলিম মানেই মার মার কাট কাট। আর এই বইটি পড়ার পরে আপনি যদি একজন প্রকৃত মুসলমান হতে চান, মানে এই বইটিতে যেভাবে বলা হয়েছে এবং নাস্তিক মুরতাদদেরকে যেভাবে মেরে ফেলতে বলা হয়েছে, তাতে আপনাকে জঙ্গি হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি একবার পড়ে দেখতে পারেন।


আচ্ছা এরপর যেইসব বইগুলো পড়ে আমি আরো নিশ্চত হই যে, মুহাম্মাদ থেকে শুরু করে অন্য যে কোনও ধর্মই আসলে কিছুই না। সেই বইগুলো হলো: আলী দস্তি’র ‘‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’’, অভিজিৎ রায়ের ‘‘বিশ্বাসের ভাইরাস’’ ও আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী এবং অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীরের ‘‘অবিশ্বাসের দর্শন’’ বইগুলো পড়ে আমার মন মানসিকতা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। এবং মনে হয় আমি বোধহয় নতুন এক জীবনে পা দিতে যাচ্ছি।


সর্বশেষ, অর্থাৎ যেটি পড়ে আমি ফাইনাল ডিসিশন নিয়েই ফেললাম নাস্তিক হয়ে যাবো, আর সেটি হলো ‘‘কোরআন’’!


কি অবাক হলেন?

জি অবাক হওয়ারই কথা!! 

কারণ কোরআন পড়ে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয় না বরং ইসলামের পথে-ই আসে।

কিন্তু আমার ব্যপারে উল্টো কেন?


আমার সাথে উল্টোটি হওয়ার কারণ কি জানেন?

কারণে যে, আমরা সবাই কোরআন শরীফটি আরবিতে পড়ি এবং মুখস্থ করি, কিন্তু কখনো এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করিনা বা জানিনা। 

তবে নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করার পর আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা শুরু করি। জানতে চেষ্টা করি যে ইসলামে কি আসলেই এই ধরনের হত্যা করার কথা বলা হয়েছে কিনা নাকি হুজুরার তাদের স্বার্থে এমনটি করছে। আর যে কারণেই আমি একটি বাংলা কোরআর শরীফ কিনি এবং সেটিকে পড়া শুরু করি।


বিশ্বাস করুন, আমি যখন কোরআন শরীফটি প্রথমবার পড়ি তখন খুবই ভয় পাই। এবং আল্লাহর কাছে তওবা করি। প্রতিজ্ঞা করি এই যে হে আল্লাহ আমার মনে আর কখনো এমন ধরনের চিন্তা ভাবনা আনবো না, তওবা, তওবা।


কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে মনকে আর মানাতে পারছিলাম না। এবং আবারো সেই কোরআন শরীফটি পড়ি এবং সেখানে মুহাম্মদ এবং আল্লাহকে নিয়ে যেইসব ভয়াভহ তথ্য পাই, এরপরই সিদ্ধান্ত নেই যে, আমি আর ইসলাম ধর্ম তো দূরের কথা কোন ধর্মই পালন করবো না। এবং এটাই আমার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।


আমি সর্বশেষ যেই কথাটি বলতে চাই, নাজিম ভাইকে হত্যা করার পর আমি খুবই কষ্ট পাই। প্রোফাইলে গিয়ে তাঁর লেখাগুরো দেখে আমার কখনো মনে হয়নি যে এই ধরনের লেখাগুলোর কারণেও কাউকে হত্যা করা যায়। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই আমার হৃদয়ের এই গহীন থেকে। আপনি আজীবনই আমাদের স্মরণে থাকবেন।


এমডিএইচ মাহাদি।

No comments